ভাবমূর্তি ফেরাতে অশোকনগরের প্রবীণ নাগরিকদের দ্বারস্থ হলেন বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। বৃহস্পতিবার অশোকনগর পুরসভা এলাকার চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানগৃহে একটি পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছিল বিধায়কের তরফে। যেখানে অশোকনগর বিধানসভা এলাকার ১০০০-এর বেশি প্রবীণ এবং অথর্ব নাগরিকদের আনা হয়েছিল। সেখানে বিধায়ক নারায়ণের উদ্যোগে তাঁদের সংবর্ধনা এবং খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। খাওয়াদাওয়ার আগে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও হয়। যেখানে বিধায়ক স্বয়ং অশোকনগরের প্রবীণ মানুষদের গলায় উত্তরীয় পরিয়ে হাতে একটি করে গোলাপ ফুল উপহার দেন। দিন পনেরো আগে অশোকনগরের এক অনুষ্ঠানমঞ্চে বিধায়কের ‘অপ্রকৃতিস্থ’ অবস্থা এবং ‘অসংলগ্ন’ কথাবার্তা বেজায় অস্বস্তিতে ফেলেছিল শাসকদল তৃণমূলকে। সেই অনুষ্ঠানের একটি ভিডিয়ো (যদিও ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) ভাইরাল হওয়ায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের রোষানলে পড়েন তিনি।
তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নির্দেশে বিধানসভার শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় শো কজ় নোটিস পাঠান নারায়ণকে। যে হেতু নারায়ণ অশোকনগরের বিধায়ক হওয়ার পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি, তাই ওই ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োর পরিপ্রেক্ষিতে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে কড়া পদক্ষেপ করে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। সম্প্রতি সেই শো কজ়ের জবাব দিয়েছেন বিধায়ক। সেই জবাবে নিজের ভুল স্বীকার করেন তিনি। যদিও, ওই শো কজ়ের জবাব দলের শীর্ষনেতাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি বলেই তৃণমূল সূত্রে খবর। তাই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, ওই ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর বিধায়ক হিসাবে নারায়ণের ভাবমূর্তি যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তা ফেরাতেই তিনি প্রবীণদের নিয়ে ওই পিকনিকের আয়োজন করেছেন। যদিও পিকনিকের দিন নারায়ণ দাবি করেছেন, শীতকালে বনভোজন, পিকনিক এবং চড়ুইভাতি করার সংস্কৃতি পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। বলেন, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সব সময় প্রবীণ, প্রবীণা, বয়স্কদের সম্মান করার কথা বলেন। সেই সূত্র ধরেই কিছু দিন আগে আমার মাথায় আসে, যাঁরা সাধারণত পিকনিকে যান, তাঁরা টিনএজের কিংবা যুবক-যুবতী। কিন্তু যাঁরা বয়স্ক, যেমন আমাদের মা-বাবারা এই ধরনের অনুষ্ঠানে যেতে পারেন না। তাই অশোকনগর পুরসভার ২৩টি ওয়ার্ডের প্রবীণ বাসিন্দাদের নিয়ে আমি এই পিকনিকের আয়োজন করেছি।’’ বয়স্ক মানুষদের বিনোদনের জন্য বাউল গানের আয়োজনও করা হয়েছিল ওই পিকনিকে।
তবে অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়কের এমন আয়োজনকে তাঁর ‘পাপস্খালন’ বলেই আক্রমণ করেছে বিজেপি। রানাঘাট উত্তর-পূর্বের বিজেপি বিধায়ক অসীম বিশ্বাস বলেন, ‘‘এক জন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বলতে পারি অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়কের ওই কাণ্ডকারখানা দেখার পর আমি নিজের লজ্জিত হয়ে পড়েছিলাম। মানুষ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে তাদের কাজ করার জন্য, অসৎ উপায়ে উপার্জন করে মদ্যপান করে অসংলগ্ন কথাবার্তা এবং অসভ্য আচরণের জন্য নয়। শুধু অশোকনগর বিধায়কই নয়, এটা শাসকদল তৃণমূলের সংস্কৃতি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ ভাবে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব একের পর এক দুর্নীতি, অপকর্ম করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে অশোকনগরের বিধায়ক ওই অসভ্য আচরণের পর নিজের পাপ ঢাকা দিতে প্রবীণ মানুষদের পিকনিকের অছিলায় ব্যবহার করছেন। আজ যে ভাবে দিল্লির মানুষ অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বুঝিয়ে দিল যে, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নতি করতে বিজেপি একমাত্র পথ, তেমনই ২০২৬ সালে বাংলার মানুষও তৃণমূল ও অশোকনগরের বিধায়কের মতো মানুষদের ছুড়ে ফেলে বিজেপিকে এ রাজ্যে ক্ষমতায় আনবেন বলেই আমি বিশ্বাস করি।’’