• বিধানসভা অধিবেশন শেষে মন্ত্রী অরূপ-ইন্দ্রনীলের দায়িত্বে মিটবে গিল্ড-ফেডারেশন সমস্যা?
    আনন্দবাজার | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • বৃহস্পতিবার ম্যারাথন বৈঠক। তার পর মধ্যরাতে পরিচালক গিল্ড-এর সিদ্ধান্ত, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের মৌখিক আশ্বাসে আস্থা রেখে শনিবার থেকে ফের সেটে পরিচালকেরা। আপাতত গিল্ড-ফেডারেশন দ্বন্দ্বের ইতি। ২০ ফেব্রুয়ারি বিধানসভা অধিবেশন শেষ হওয়ার পর পরিচালক-প্রযোজক এবং সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে ফেডারেশনের সমস্ত সদস্যদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং ইন্দ্রনীল সেন। তখনই পাকাপাকি মিটমাটের সম্ভাবনা। তার আগে পর্যন্ত পরিচালকেরা সেটে যাবেন। আগের মতোই শুটিং জারি থাকবে। যদিও বিষয়টি নিয়ে ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস কোনও মন্তব্য করেননি।

    যে তিন পরিচালক, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, শ্রীজিৎ রায়কে নিয়ে নতুন বছরে ঘটনার সূত্রপাত, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী? কৌশিক যথারীতি ফোনে অধরা। বৃহস্পতিবার স্টুডিয়োপাড়ায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার সময় স্বরূপ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, পরিচালক ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ফেডারেশনের আর কোনও সমস্যা নেই। শনিবার সমাজমাধ্যমে ক্ষমা চেয়ে নেন শ্রীজিৎ-ও। আনন্দবাজার অনলাইনকে পরিচালক জয়দীপ বলেছেন, “কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমি যে প্রযোজক রূপে ফেডারেশনের মুখোমুখি সেটা সংগঠন বুঝতে পারেনি। বৃহস্পতিবার সেটা পরিষ্কার হতেই বিষয়টি মিটে গিয়েছে।” তা হলে কবে থেকে ‘অ্যাডভোকেট অচিন্ত্য আইচ’-এর শুটিং শুরু? পরিচালকের কথায়, “অভিনেতারা অন্য কাজে তারিখ দিয়ে ফেলেছেন। আবার নতুন করে প্রত্যেকের তারিখ নিতে হবে।” এর আগে প্রযোজক-পরিচালক জানিয়েছেন, সিরিজ়ের খাতিরে ইতিমধ্যেই তাঁর ৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। সেই লোকসান মেটাবেন কী ভাবে? তিনি জানিয়েছেন, সেটা কাজ শুরুর পর বুঝতে পারবেন।

    বৃহস্পতিবার পরিচালক গিল্ডের সদস্যেরা সংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলেন, তাঁদের কিছু শর্ত রয়েছে। লিখিত ভাবে সেই শর্তগুলো মানা হলে তবেই তাঁরা সেটে যাবেন। বৃহস্পতিবার মন্ত্রী অরূপ এবং ইন্দ্রনীল বিধানসভা অধিবেশন শেষের পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিলে পরিচালকেরা কাজে ফেরেন। যদিও মন্ত্রীরা লিখিত কোনও আশ্বাস দেননি। সেই জায়গা থেকে প্রশ্ন থেকেই যায়, ২০ ফেব্রুয়ারির পর আদৌ আলোচনা সভা বসবে? বসলেও তখনও কি পরিচালকদের রাখা শর্তের লিখিত আশ্বাস দেবে ফেডারেশন? না দিলে তখনও কি পারস্পরিক মৌখিক আশ্বাসেই ফের কাজে ফিরবেন পরিচালকেরা? না কি আবারও তাঁরা তখন কর্মবিমুখ হবেন?

    এই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল গিল্ডের সভাপতি সুব্রত সেন, সম্পাদক সুদেষ্ণা রায়, সংগঠনের কার্যকরী কমিটির অন্যতম সদস্য রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্যের কাছে। সুব্রত জানিয়েছেন, পুরোটাই তখকার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি সুদেষ্ণা। পরমব্রতের কথায়, “আমি কিছু বলতে চাই না এই বিষয়ে।” নীরব রাজ।

    মুখ খুলেছেন অনির্বাণ, প্রযোজক অর্ক গঙ্গোপাধ্যায়, স্নেহাশিস চক্রবর্তী। অনির্বাণের কথায়, “রবিবার সংগঠনের বার্ষিক অধিবেশন। সেখানে এই নিয়ে কথা হবে। এ ছাড়াও, যেমন যেমন পরিস্থিতি চলবে সে রকম ভাবে সাংগঠনিক বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” পরিস্থিতি না বদলালে আবারও কি পরিচালকেরা শুটিং থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেবেন? এ প্রসঙ্গে পরিচালক-অভিনেতার মত, “ভবিষ্যৎ নিয়ে আগাম কোনও কথা বলতে চাই না। পুরোটাই পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে সংগঠন সিদ্ধান্ত নেবে।”

    শুক্রবার প্রযোজক অর্কর ধারাবাহিকের শুটিং হয়নি, এই খবর ফেডারেশন সভাপতি জানেন। আনন্দবাজার অনলাইনের তোলা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রথমে সে প্রসঙ্গে বক্তব্য রেখেছেন অর্ক। তিনি বলেছেন, “আমি ৩০ দিন শুটিং করি না। আমার প্রযোজনা সংস্থা ২৪ দিন কাজ করে। সেই অনুযায়ী শুক্রবার এমনিতেই আমার অভিনেতাদের ছুটি ছিল। সম্ভবত তার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।” এর পরেই পরিচালকদের কাজে ফেরা প্রসঙ্গে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “লিখিত দিলেই ফেডারেশন শর্তভঙ্গ করবে না এমন কথা কে দেবেন? শর্ত মানার লিখিত আশ্বাস দেওয়ার পরে ফেডারেশন অন্য সমস্যার সূত্রপাত ঘটাবে না তা-ই বা কে বলতে পারে? মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস কি কাজ ফেলে সারা ক্ষণ পাহারা দেবেন?”

    তা হলে গিল্ড-ফেডারেশন কাজিয়ার সমাধান কী? অর্কর সাফ জবাব, এ বার ফেডারেশনকে বুঝতে হবে, কাজের পরিবেশ নষ্ট না করতে চাইলে কিছু বিষয়ে তাদেরও নরম হতে হবে। এতে ইন্ডাস্ট্রি, পরিচালক, প্রযোজক, টেকনিশিয়ান— প্রত্যেকেই লাভবান হবেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)