রুটি বেলতে পারো? নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে এই প্রশ্ন করায় তার জবাব, ‘‘রুটি বেলা তো আমার কাজ নয়। রুটি তো মেয়েরা বেলে। আমার মা রুটি বেলেন। দিদিও রুটি বেলে।’’
ছেলেরা রুটি বেলে না কেন? ছেলেদের কি রুটি বেলা বারণ? ছেলেদের আর মেয়েদের কাজের এই অদ্ভুত বিভাজন কে করে দিয়েছে?
সম্প্রতি পড়ুয়াদের মধ্যে এই প্রশ্ন তোলা হল যাদবপুর বিদ্যাপীঠে আয়োজিত এক কর্মশালায়, যেখানে দক্ষিণ কলকাতার ৩০টি স্কুলের পড়ুয়ারা অংশ নিয়েছিল। সেখানে শেখানো হল, কাজের লিঙ্গ-ভিত্তিক বিভাজন সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায় না, বরং পিছিয়ে দেয়। ছেলেরা রুটিও বেলতে পারে, কাপড়ও কাচতে পারে। একই ভাবে মেয়েরা যেমন মুদিখানার দোকান দিতে পারে, আবার টোটোও চালাতে পারে। শুধু তা-ই নয়, মনে আঘাত লাগলে মেয়েদের মতো ছেলেরাও প্রকাশ্যে কাঁদতে পারে। এর মধ্যে অস্বাভাবিকতা কিছু নেই। তাই কোনও ছেলে কেঁদে ফেললে তাকে ‘মেয়েদের মতো কাঁদছে’, এমনটা বলা কাম্য নয়। এতে লিঙ্গ-বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। এ সবের পাশাপাশি পাঠ দেওয়া হল মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়েও।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, ‘‘বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারাও এসেছিলেন। যে সমস্ত পড়ুয়া এই কর্মশালায় এসেছিল, তাদের বলা হয়েছে, স্কুলে ফিরে গিয়ে বাকিদের মধ্যে লিঙ্গ-সাম্যের ধারণা তৈরি করতে হবে। যে শিক্ষকেরা কর্মশালায় এসেছিলেন, আশা করি, তাঁরাও ক্লাসের ফাঁকে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সচেষ্ট হবেন এবং লিঙ্গ-সাম্যের পরিবেশ তৈরি করবেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের আধিকারিক তুলিকা দাস এবং শিক্ষাবিদ ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। সেখানে উপস্থিত পড়ুয়াদের বলা হয়, প্রতিদিনের জীবনে নানা ধরনের ঘটনায় মনের উপরে প্রভাব পড়ে। তা থেকে মনে তৈরি হয় তরঙ্গ। সেই তরঙ্গ স্কুলের আঙিনাতেও পড়ুয়াদের আচরণে নানা প্রভাব ফেলতে পারে। যদি কোনও ঘটনা মনকে বিশেষ ভাবে আন্দোলিত করে বা ভারাক্রান্ত করে তোলে, তা হলে সে ব্যাপারে স্কুলের কোনও শিক্ষককে অথবা বাড়িতে মা-বাবাকে খোলাখুলি বলতে হবে। বিশেষজ্ঞেরা শিক্ষকদের জানালেন, শুধু পড়াশোনা নয়, স্কুলে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে পড়ুয়ারা একটি সুস্থ সংস্কৃতির পথে চলে। সকলের মধ্যে আত্মমর্যাদার বোধ তৈরি করতে হবে।
ওই কর্মশালার শেষে পড়ুয়ারা জানাল, এই ধরনের কর্মশালা পাঠ্য বইয়ের বাইরে গিয়ে অনেক কিছু ভাবতে শেখায়। এখানে এসেই তারা শিখেছে, সকলের সব কথায় ‘হ্যাঁ’ বলতে নেই। কোনও কিছু তাদের মনের মতো না হলে জোর গলায় ‘না’ বলাও শিখতে হবে।