নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: কয়েক বছরের ব্যবধান। এর মধ্যেই কয়েকশো কেজি মাদক ভারতে এনেছিল মাস্টারমাইন্ড গুডলাক। দেশের একাধিক রাজ্যে ছড়িয়েছিল জাল। নাইজেরিয়ান সঙ্গীদের নিয়ে গোটা কারবার পরিচালনা করত সে। যদিও পুলিসের একটি সূত্রের দাবি, সমস্ত মাদক বিক্রি করতে পারেনি ওই নাইজেরিয়ান পাচারকারী ও তার দল। একাধিক রাজ্যের পুলিস, স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ, এসটিএফের অভিযানে ওই মাদকের প্রায় ৭৫ শতাংশ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। একাধিক রাজ্যে পুলিস একাধিক সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পরই সতর্ক হয়ে যায় গুডলাক। এরপর নজর পড়ে ছোট শহরে। স্থানীয় পাচারকারীদের একাংশের সঙ্গে পরিচয় বাড়িয়ে শুরু করে কারবার। কখনও দিল্লিতে, কখনও বেঙ্গালুরুতে ডেরা জমিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ রেখেই কারবার চলছিল। তবে শিলিগুড়িতে গ্রেপ্তার এক পাচারকারীর দেওয়া তথ্যে শেষরক্ষা হয়নি গুডলাকের।
রবিবার উত্তর প্রদেশের গুরুগ্রামের একটি ফ্ল্যাট থেকে গুডলাককে গ্রেপ্তার করে এসটিএফের বিশেষ দল। মাদক পাচারের জন্য সে শিলিগুড়ির পাশাং মোক্তান নামে এক পাচারকারীকে সাগরেদ বানিয়েছিল বলে জানতে পেরেছে তদন্তকারীরা। শিলিগুড়িতে পাশাং গ্রেপ্তার হতেই তাকে জেরা করে গুডলাকের হদিস পায় এসটিএফ।
এসটিএফের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গুডলাককে জেরা করে তাঁরা বিভিন্ন তথ্য হাতে পেতে চাইছেন। সেই কারণেই জেরায় পাওয়া তথ্য আপাতত সংবাদমাধ্যমের সামনে গোপন রাখা হচ্ছে। সূত্রের খবর, গুডলাকের মতোই তার কিছু আফ্রিকান সাগরেদ দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত। কেউ কেউ ফুটবল খেলতে এদেশে এসেছেন। কখনও তাদের মাধ্যমে আবার কখনও একাধিক স্থল ও জলপথের গোপন এলাকা দিয়ে মাদক এই দেশে নিয়ে আসত গুডলাক। ১৩ বছর এদেশে থাকায় কয়েকশো কেজি কোকেন, ব্রাউন সুগার নিয়ে এসেছিল গুডলাক ও তার সাগরেদরা। পুলিসের অভিযানে বেশি পরিমাণে মাদক ধরা পড়লেই জায়গা বদল করে নতুন ডেরা খুঁজত গুডলাক।
প্রথম দিকে দেশের জনপ্রিয় বড় শহরগুলিকে টার্গেট করত সে। নতুন বছরের শুরুতে উৎসব অনুষ্ঠানের সময় এই মাদকের চাহিদা মাত্রা ছাড়ায়। সেই সময় একাধিক ছোট ছোট পাচারকারীর মাধ্যমে বড় বড় শহর থেকে শুরু করে হলিডে ডেস্টিনেশনগুলিতে মাদক পাচারের জাল ছড়িয়েছিল গুডলাক। বড় শহরগুলিতে দ্রুত পুলিসের নজরদারি পুলিসের বেড়ে যাচ্ছিল। ফলে ব্যবসায় মন্দা আসে। এরপরই ছোট শহরের পাচারকারীর দিকে নিজের নজর ঘোরায় গুডলাক। শিলিগুড়ি সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক শহরের পাচারকারীদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলেই তদন্তকারীদের দাবি। গুডলাকের এই কাণ্ডকারখানা সম্পর্কে পুলিস যত খোঁজ নিচ্ছে তত অবাক হচ্ছে। আফ্রিকার একটি ছোট দেশ থেকে এসে ভারতের মতো বড় দেশে কীভাবে এত তাড়াতাড়ি নিজের মাদকচক্রের জাল ছড়াল? কে বা কারা তাদের এই কাজে মদত দিত সেই বিষয়েও অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিসের বিশেষ দল।