• হাতে লাল গোলাপ আর বই! শেষ লগ্নে বইমেলায় ভালোবাসার মিছিল
    বর্তমান | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বইমেলায় সভা চলছে। মাইক থেকে ভেসে আসছে কবি-সাহিত্যিকদের সাবধানবাণী, ‘প্রেম কিন্তু কখনওই নিরাপদ নয়। কখন যে প্রেমিক-প্রেমিকা অন্য কারও হয়ে যাবে, বলা মুশকিল।’ এ কথা কানে আসতেই মেলায় ঘুরতে থাকা তরুণ-তরুণীরা থমকালেন। চোখ বড় হল। মুখে হাসি। চোখে শঙ্কা। 


    শুরু হয়েছে ‘ভালোবাসার সপ্তাহ’। তার আঁচ বইমেলা প্রাঙ্গণেও। কারও হাতে হাত। কারও মুখ লজ্জা লজ্জা। কেউ প্রেমিকের খুলে যাওয়া জুতোর ফিতে বেঁধে দিচ্ছেন। কেউ প্রেমিকার শাড়ির কুচি ঠিক করে দিচ্ছেন। তা দেখে ফিকফিক হাসি বন্ধুদের মুখে। কেউ আরও এগিয়ে। সাহসী হয়ে গোছা গোছা ফুল নিয়ে ক্যামেরার কেরামতিতে মজে। 


    ‘নামটা লিখবেন না প্লিজ!’ বলে প্রেম আর বইয়ের সম্পর্ক নিয়ে বলতে শুরু করলেন প্রেমিক-‘কবিতা পড়তেই ভালোবাসি। প্রেমে পড়ার পর আরও বেড়ে গিয়েছে। খুব রাগ করলে বই থেকে চার লাইন তুলে হোয়াটসঅ্যাপ করে দেব। দুঃখ হলেও দেব কবিতার পঙক্তি। প্রেমে কবিতাই তো প্রধান।’ দূরে ছিলেন প্রেমিকা। কাছে এলেন। প্রসঙ্গ ঘোরালেন প্রেমিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রেমিকাও। তিনি যা বললেন তাতে গেল ছবি পাল্টে-‘বই থেকে দশ হাত দূরে থাকত। আমিই তো গল্প-কবিতা পড়াতে শেখালাম।’ এ করতে করতেই তো বাঙালি তরুণ-তরুণীরা একদিন কবি হয়ে ওঠেন। উত্তরপাড়ার স্বর্ণাভ পালের বক্তব্য-‘এই বইমেলা থেকেই তো বই কিনে প্রেমিকাকে দিয়েছিলাম। ভিতরে দিয়েছিলাম চিরকুট। ভয়ে ছিলাম, তা যেন বাড়ির লোকের হাতে না পড়ে।’ স্বর্ণাভের পাশে এখন সেই একদা প্রেমিকা। তিনি বর্তমানে স্ত্রী। বইমেলার প্রেম কি বদলে যায় বিয়ের পর। বাগুইআটি থেকে শিশু সন্তানদের নিয়ে মেলায় এসেছেন মা। কথা ছিল, মেলা মাঠে সন্তানদের সামলাবেন স্বামী। প্রবেশ করেই স্ত্রীয়ের বক্তব্য, এবার ওদের ধরো। স্বামী ভদ্রলোকটি সেই প্রেমিক অবস্থা থেকেই বাধ্য। মেলায় এক সন্তানকে কোলে নিলেন। আর একজনের ধরলেন হাত। স্ত্রী এখন ঝাড়া হাত-পা।  


    এবার তো বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন নেই। তা বলে কি সত্যিই বাংলাদেশের কোনও বইও নেই। সোনারপুরের সৌমিক বিশ্বাস বললেন, ‘অফিস থেকে ফেরার পথে ভেবেছিলাম হুমায়ূন আহমেদের ‘রূপা’ কিনব। ওকে দেব। কিন্তু পাচ্ছি না। আর একটু খুঁজে দেখি।’ এরকম বই খোঁজাখুঁজি চলল মেলার সর্বত্র। খোঁজা চলাকালীন হাতে উঠে এল হাত। কাঁধ ছুঁয়ে গেল কাঁধে। দৃষ্টি বিনিময় গাঢ় হল। হাসি হল আরও অমলিন। বইমেলা লাগাতার ফেভিকলের মতো জুড়ে চলল দু’জনের মন। ভালোবাসার মিছিল বেড়েই চলল রাত গড়ানোর সঙ্গে। 
  • Link to this news (বর্তমান)