• ভুয়ো জবকার্ডে যাওয়া টাকার খোঁজ শুরু, রাজ্যের উদ্যোগে জল্পনা তুঙ্গে
    বর্তমান | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • প্রীতেশ বসু, কলকাতা: প্রায় তিন বছর ধরে বাংলার ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। রাজ্যের হকের বকেয়া নিয়ে কথা বলার জন্য কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের সময়ও চেয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও, সময় দেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বঞ্চনা ও বৈষম্যের এই আবর্তেও স্বচ্ছতার প্রশ্নে কোনও আপস করতে রাজি নয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কেন্দ্রের বঞ্চনার মধ্যেও প্রত্যেক জেলা প্রশাসনকে ১০০ দিনের কাজের ভুয়ো জব কার্ড সংক্রান্ত তথ্য তলব করল নবান্ন। যাদের ভুয়ো জব কার্ড বাতিল করা হয়েছে, তাঁরা কার্ড বাতিল হওয়ার আগে কোনও টাকা পেয়েছিলেন কি না, সেই তথ্যই খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ফরম্যাটে দ্রুত রিপোর্ট পাঠাবে জেলা কর্তৃপক্ষ। 


    কিন্তু কেন্দ্র যখন টাকাই দেয় না তখন হঠাৎ করে কেন এই রিপোর্ট সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরির প্রয়োজন পড়ল কেন? প্রশ্নের উত্তরে, রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, টাকা দিক বা না দিক, আমরা আমাদের কাজ করে চলেছি। যাতে আমাদের দিকে কেউ কখনও আঙুল তুলতে না পারে। যাতে যেকোনও সময় এবং প্রয়োজনে আমরা সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারি। আমাদের লুকোনোর কোনও ব্যাপার নেই। 


    সূত্রের খবর, শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে প্রত্যেক জেলার মনরেগার (১০০ দিনের কাজ) ডিস্ট্রিক্ট নোডাল অফিসারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করা হয় পঞ্চায়েত দপ্তরের তরফে। সেখানেই ভুয়ো জব কার্ড থাকাকালীন সংশ্লিষ্ট হোল্ডার কোনও টাকা পেয়েছেন কি না, তা খুঁজতে বলা হয়েছে। আবার এই বৈঠকে এই প্রকল্পের অডিট সংক্রান্ত কাজও দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেই সূত্রের খবর। একই সঙ্গে যেকোনও কেন্দ্রীয় সাহায্য প্রাপ্ত প্রকল্পে দিল্লির প্রস্তাবিত জাস্ট-ইন-টাইম বা ‘এসএনএ স্পর্শ’ ব্যবস্থাপনা চালু না করলে, কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পাওয়া যাবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে মোদি সরকার। এদিন জেলাগুলিকে এই ব্যবস্থাপনাও সুনিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে বলেও সূত্রের খবর। আর এর জেরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি বাংলার মনরেগার টাকা পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে? কিন্তু বাজেটের আগে রাজ্যের থেকে প্রস্তাবিত লেবার বাজেট না চাওয়া সেই আশায় কিছুটা হলেও জল ঢেলে দিয়েছে বলেও জানাচ্ছে প্রশাসনের একাংশ।


    ২০২২ সাল থেকে বাংলার ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে মোদি সরকার। তিন বছরে একাধিকবার রাজ্যের তরফে এই টাকা ছাড়ার দাবি জানানো হয়েছে। টাকা না ছাড়লেও, শর্তের চাপ বাড়াতে রাজ্য সরকারের কাছে একের পর এক চিঠি পাঠিয়েই চলেছে নয়া দিল্লি। গত ২৫ জানুয়ারি ১০০ দিনের কাজের জব কার্ড বাতিল সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠায় কেন্দ্র। ১০ পাতার এই চিঠিতে ভুয়ো জব কার্ড বাতিল করার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) ফের একবার নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিন বছর ধরে কাজ না করলে, বাসস্থান ছেড়ে দীর্ঘদিনের জন্য অন্যত্র চলে গেলে, একই পরিবারের অনেকগুলি কার্ড হয়ে গেলে বা মৃত্যু হলে তাঁদের কার্ড ভুয়ো হিসেবে চিহ্নিত করে বাতিল করা হয়। সেই ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণে যাদের জব কার্ড বাতিল হয়েছে, তাদের পরিবার ন্যায্য প্রাপ্যের টাকা পেয়েছে কি না, তাও সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।
  • Link to this news (বর্তমান)