ইতিহাস গড়ে কুমেরু মহাসাগরে পাড়ি প্রেসিডেন্সির দুই গবেষকের
বর্তমান | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কুমেরু মহাসাগরে পাড়ি দিতে চলেছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক সৌম্যশুভ্র বৈষ্ণব এবং স্নিগ্ধা ভৌমিক। আজ, রবিবার রাতেই তাঁদের মরিশাস পৌঁছে যাওয়ার কথা। সেখান থেকে তাঁরা জাহাজে রওনা দেবেন গন্তব্যে। সেই সঙ্গে নয়া ইতিহাসও গড়বেন স্নিগ্ধা। রাজ্যের কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম মহিলা গবেষক হিসেবে কুমেরু মহাসাগরে অনুসন্ধান চালানোর শিরোপা উঠতে চলেছে তাঁর মুকুটে।
পূর্ব ভারত থেকে এই দু’জনই ভারতীয় দলের এই অভিযানে প্রতিনিধিত্ব করছেন। এর আগে বিজ্ঞানী বা অধ্যাপকদের এই অভিযানে শামিল হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু গবেষকদের এই অভিযানে নেওয়ার নজির বিরল। সাদার্ন সি’র প্রিডজ বে নামে একটি উপসাগরীয় অঞ্চলে অনুসন্ধান চালাবেন মেরিন বায়োলজির এই দুই গবেষক। এক মাসের বেশি সময় সেখানে কাটিয়ে ফিরে আসবেন তাঁরা। এই প্রিডজ বে অঞ্চলের কাছেই ভারতের আন্টার্কটিকা গবেষণাগার ‘ভারতী’ অবস্থিত।
স্নিগ্ধা বলেন, ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ডিসকভারি বা অ্যানিম্যাল প্ল্যানেটের মতো চ্যানেল দেখে জীবজগতের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়েছিস। সেই সঙ্গে বাস্তুতন্ত্রও আমার খুব প্রিয় বিষয়। কুমেরু মহাসাগরে সেই গবেষণার সুযোগ পাওয়া তো স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো।’ তিনি প্রেসিডেন্সির বায়োলজিক্যাল সায়েন্স (জুলজি) বিভাগে যখন যোগ দেন, সেই সময় এখানকার সহকারী অধ্যাপক সুমিত মণ্ডল কুমেরু সাগরের অভিযানে ছিলেন। তাঁর আনা নমুনা নিয়ে গবেষণা করতে করতেই অভিযানে যাওয়ার ইচ্ছেটা আরও তীব্র হয় তাঁর।
একই অভিজ্ঞতা সৌম্যশুভ্রর। তাঁর কথায়, ‘টিভিতে দেখেছি, বইয়ে পড়েছি সেই তুষারাবৃত সাগরের কথা। বাস্তবে সেখানে যেতে পারা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ঘটনা।’ প্রসঙ্গত, ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল সেন্টার ফর পোলার অ্যান্ড ওশান রিসার্চ (এনসিপিওআর) প্রকল্পের আওতায় এই অভিযান চালায় ভারত। এখনও পর্যন্ত ১২ বার এই অভিযান হয়েছে। দুই গবেষকের কাছে ২০২২ সালে একবার সুযোগ এলেও সেই অভিযান বাতিল হয়ে যায়। ফের এসেছে সেই সুযোগ। স্নিগ্ধার কাজ মূলত সমুদ্রতলের দৃশ্যমান জীব নিয়ে। আর সৌম্যশুভ্র কাজ করেন আণুবীক্ষণিক জীব নিয়ে। দু’জনেরই লক্ষ্য কোনও নতুন জীব আবিষ্কার। পাশাপাশি, সেই জীবদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, জিনগত বিশ্লেষণ এবং মলিকিউলার ট্যাক্সোনমির মাধ্যমে জীবগুলির উৎস নির্ণয় এবং প্রজাতিগত বিভাজনও অন্যতম উদ্দেশ্য। সামুদ্রিক পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই প্রাণীগুলি। এ বছর উষ্ণস্রোতের কারণে কুমেরু মহাসাগরে বরফ কম জমেছে। তাই আরও ভালোভাবে নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে আশাবাদী তাঁরা। সুমিতবাবু বলেন, ‘আমি যে নমুনা নিয়ে এসেছিলাম, তা নিয়ে একাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়েছে। তাই একই জায়গা থেকে ফের নমুনা নিয়ে একটি তুলনামূলক পর্যবেক্ষণের সুযোগ রয়েছে। এটি অনেক নতুন দিক উন্মোচন করবে বলে আমি আশাবাদী।’