বইমেলা শেষ আজ , ৮টার পরিবর্তে দরজা বন্ধ হবে ৯টায়, গেটেই লাইন, শনিবার উপচে পড়ল ভিড়
বর্তমান | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
অলকাভ নিয়োগী, বিধাননগর: ‘দেখিস, গলে গিয়ে গায়ে যেন না পড়ে!’ মায়ের মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই খুদে বইপ্রেমী একবার জিভ বুলিয়ে নিল হাতে ধরা আইসক্রিমে। তার অন্য হাতে বইভর্তি ব্যাগ। আরও কিছু কেনা বাকি। তাই মায়ের সঙ্গে স্টলের সামনে দাঁড়িয়েছে সে। কিন্তু দীর্ঘ সেই অপেক্ষা! কচ্ছপের গতিতে এগচ্ছে স্টলে ঢোকার লাইন। ঠিক যেন ঠাকুর দেখার ভিড়! আর স্টলগুলি যেন থিমের মণ্ডপ! শনিবার আক্ষরিক অর্থেই জনস্রোতে ভাসল কলকাতা বইমেলা। স্টলের সামনে লম্বা লাইন তো আছেই। মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে গেটের সামনেও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর হবে নাই বা কেন! প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের ভিড়। আজ, রবিবার বইমেলার সমাপ্তি। বাঙালির বই-পার্বণের ‘বিজয়া’। তাই আয়োজকরা জানিয়েছেন, শেষ দিনে রাত ৮টা নয়, অতিরিক্ত আরও এক ঘণ্টা খোলা থাকবে বইমেলা।
বেলা ২টো থেকেই ৭ নম্বর গেটের সামনে লম্বা লাইন। কাতারে কাতারে মানুষ ঢুকছে। গেটের মুখে মেটাল ডিটেক্টর। লোক গুনতে বসানো হয়েছে কাউন্টিং মেশিনও। মেলা প্রাঙ্গণ তখন থেকেই পাঠকদের ভিড়ে গমগম করছে। গান, কবিতা, আড্ডায় জমজমাট মেলা প্রাঙ্গণ। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও ভিড় কমার কোনও লক্ষণ নেই। ততক্ষণে যদিও কয়েক হাজার মানুষ মেলা থেকে বাড়ির পথ ধরেছেন।
বইয়ের স্টলের ভিড় গিয়ে উঠেছে ফুড প্যাভিলিয়নে। সেখানে ফাঁকা চেয়ার পাওয়া মানে লটারি জেতা! মিউজিক্যাল চেয়ারের নাছোড়বান্দা প্রতিযোগীর মতো যাঁরা ওঁত পেতে বসেছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ বসতে পেরেছেন। কিন্তু অর্ডার করা খাবার এসেছে দীর্ঘ সময় পর। কেউ কেউ আবার পার্সেল করে নিয়েছেন ব্র্যান্ডেড মাটন বিরিয়ানি! ভিড় কি শুধু মেলা ঘোরার? কেনাকাটা কেমন হল? পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের তরুণ সদস্য তথা দে’জ পাবলিশিংয়ের অপু দে বলেন, ‘এবার প্রথম দিন থেকেই ইতিবাচক একটি বিষয় খেয়াল করলাম। স্টলে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বই কিনে বাড়ি ফিরেছেন। এখনও পর্যন্ত আমরা যা হিসেব পাচ্ছি, তাতে গতবারের চেয়ে অন্তত ১০ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে।’ গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এবার ভিড় যেমন হচ্ছে, বিক্রিও হচ্ছে তেমন। শুক্রবার পর্যন্ত ১৯ লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। শনিবার ধরলে তা ২৩ লক্ষ। মেলা আরও একদিন বাকি। এবার ১৩ দিনের বইমেলা হচ্ছে। গতবার ১৪ দিনের ছিল। তাছাড়া, গতবারের চেয়ে এবার ছুটিও কম ছিল। তারপরও বিক্রি বেড়েছে।’ পাঠকদের এই উৎসাহ-উদ্দীপনার কথা মাথায় রেখেই শেষ দিনের বইমেলা রাত ৯টা পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।