• অভিনব উদ্যোগ, চুরি ঠেকাতে দশ টাকার বই
    বর্তমান | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: হাজারখানেক বইয়ের স্টল, একাধিক লিটল ম্যাগাজিনের টেবিল। সবমিলিয়ে ‘মেলা বই’ কলকাতা বইমেলায়। রাস্তায় ট্রাফিকের দড়ি নামতেই অষ্টমীর ভিড়ের কায়দায় ছুট জনতার। কীসের টানে? বলা মুশকিল। কিন্তু এই ভিড়ে সেঁধিয়ে বই চুরি বইমেলার বহুদিনের পরম্পরা। কোন বই চুরি হচ্ছে, কোথা থেকে চুরি হচ্ছে, কে চুরি করছেন এবং কেন চুরি করছেন— এসব আপাত সরল প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বসলে বিষয়টির অনেকগুলি দিক উন্মোচিত হয়। এর সঙ্গে কখনও মিশে থাকে আমাদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির ছবি, কখনও বা মানব মনের গহিন রসায়ন।


    কার্যত যে কোনও চুরির মতোই বই চুরির সঙ্গেও ‘অন্যায়’ বা ‘পাপ’এর ধারণা জুড়ে থাকে। তবুও একে মোটা দাগের ‘অপরাধ’ বলে দেগে দেওয়া হয়ত যায় না। আর সেই ভাবনা থেকেই এই তথাকথিত ‘বই চুরি’ ঠেকাতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে ‘কলিকাতা লেটারপ্রেস’ (স্টল নম্বর: ৩৪৪)। কি সেই উদ্যোগ? মেলার শেষ ১০ দিন মাত্র ১০ টাকায় বই বিক্রি করছে প্রকাশনা সংস্থাটি। আগে এলে আগে পাবেন এই ভিত্তিতে রোজ ৫০টি করে দিচ্ছেন তারা। সংস্থার তরফে পলাশ বর্মণের কথায়, ‘চুরি করে বই পড়া থেকে মানুষকে বিরত রাখার জন্য এই উদ্যোগ বললে ভুল হবে। এটা নিছক মজা করেই লেখা। এখন চুরি কম হয়। কারণ মানুষের বই পড়ার প্রবণতাই কমে গিয়েছে। আমি বই চুরির বিরুদ্ধে। কিন্তু চুরি(লুকিয়ে অর্থে) করে বই পড়ায় কোনও অপরাধ আমি দেখি না।’ পত্রভারতী প্রকাশনার তরফে ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়েরও একই মত। তাঁর সাফ কথা, ‘এ বছর আমাদের স্টলে তেমন কিছু ঘটেনি। সারা মেলাতেই এরকম কিছু ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। মানুষের মধ্যে বই কেনার প্রবণতা এখন বেড়েছে বলেই মনে হয়।’ আগে বইমেলায় বই চুরির ট্রেন্ড যে ছিল তা মানছেন দেজ পাবলিশার্স এর কর্ণধার সুধাংশু দে। তিনি বলেন, ‘একটা সময় তো খুবই বই চুরি হতো। দিন দিন সেটা কমছে। আগে বই চোর ধরা পড়ত। কখনও পুরো বইয়ের দাম নিতাম। আবার কমিশন দিতাম না, এরকমও হয়েছে। এ বছর প্রচুর ভিড় হচ্ছে। বইপ্রেমী মানুষরা আসছেন। এ বছর হয়েছে কি না এখনও দেখা হয়নি।’ তুলনামূলকভাবে ছোট প্রকাশকদের স্টল থেকে চুরি হয় বেশি। এ বছর বই চুরি হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে বেশিরভাগই জানালেন, ‘হয়নি সেটা হলফ করে বলা যাবে না। মেলা মিটলে হিসেব মেলানোর সময় বোঝা যাবে।’ 


    বই-চুরি কমে যাওয়ার নেপথ্যে একটি কারণ যদি পড়ার প্রবণতা কমে যাওয়া হয়, তাহলে আর একটি কারণ আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। সময়টা শীত-বসন্তের মাঝামাঝি হলেও এ বছর বইমেলায় ঘুরতে বেশ গরমই লাগছে। ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুরে চোখ কুঁচকে বসে আছেন বিক্রেতারা। ক্রেতাদের গা থেকে সরে গিয়েছে সোয়েটার, জ্যাকেট, চাদর। গ্রীষ্মের এই এক মাধুর্য। চাদর বা জ্যাকেটের তলায় বই লুকিয়ে স্বচ্ছন্দে চলে যাওয়া যায় না। সেটাও এবারের বইমেলায় বই-চুরির ঘটনা কমে যাওয়ার একটি কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)