• সাইবার অপরাধের বাড়বাড়ন্ত রাজ্যে, এক বছরে উধাও ১২০০ কোটি
    বর্তমান | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সুজিত ভৌমিক, কলকাতা: সাইবার অপরাধের রমরমা বাংলায়! গত এক বছরে অনলাইন জালিয়াতির চক্করে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা খুইয়েছেন এরাজ্যের মানুষ। শুধু কলকাতা নয়, সর্বস্বান্তের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দারা রয়েছেন। অতি সম্প্রতি উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এই তথ্য তুলে ধরেছেন কলকাতার সিপি মনোজ ভার্মা স্বয়ং। পুলিস মহলের অবশ্য পর্যবেক্ষণ, আর পাঁচটা অপরাধের মতো সাইবার ক্রাইমের ক্ষেত্রেও প্রতারিতরা সবাই থানা-পুলিসে অভিযোগ দায়ের করেন না। সেক্ষেত্রে খোয়া যাওয়া টাকার পরিমাণ চোখ বন্ধ করে ১৩০০ কোটি টাকার শিখর ছুঁতে পারে। 


    লালবাজারের এক সূত্র জানাচ্ছে, সিপি ওই বৈঠকে সাইবার ক্রাইমের ব্যাপকতা তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন,  ‘শুধুমাত্র ২০২৪ সালে সাইবার  জালিয়াতদের খপ্পরে পড়ে রাজ্য পুলিসের এলাকার বাসিন্দারা প্রায়  ৯০০ কোটি টাকা হারিয়েছেন। সেখানে ওই বছরেই কলকাতায় খোয়া গিয়েছে  ২৭৩ কোটি টাকা।’ কী কী হতে পারত এই টাকায়? ২০২৪-২৫ সালের বাজেটে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের জন্য ১৩৭৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ধার্য করেছিল রাজ্য সরকার। এই অর্থে ‘কন্যাশ্রী’ ভাতা দিয়েছে রাজ্য সরকার। অর্থাৎ সাইবার অপরাধে গত এক বছরে এরাজ্যে আম জনতার যত টাকা খোয়া গিয়েছে, তাতে দ্বিগুণ মেয়েকে কন্যাশ্রী দেওয়া যেত। 


    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে প্রথম ৯ মাসে ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সাইবার জালিয়াতরা। অর্থবর্ষ শেষে সেই অঙ্ক ১৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। পরিংসখ্যান বলছে, হালে ডিজিটাল অ্যারেস্ট, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রতারণায় সবচেয়ে বেশি টাকা হারাচ্ছেন রাজ্যের বাসিন্দারা। কলকাতা সহ গোটা রাজ্যে সাইবার ক্রাইমের এই বাড়বাড়ন্তে রীতিমতো বিচলিত কলকাতা ও রাজ্য পুলিসের শীর্ষকর্তারা। কারণ, ফি বছর রাজ্যে অনলাইনে যত টাকা খোয়া যায়, তার মাত্র ১০ শতাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তদন্তকারীদের। তাই পুলিসকর্তারা চাইছেন, সাইবার ক্রাইম নিয়ে ধরপাকড় এবং সচেতনতা যেমন চলছে চলুক, পাশাপাশি আম জনতার খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধারে বাড়তি জোর দিতে হবে। এরজন্য কয়েকটি লিখিত নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সাইবার ক্রাইমের টাকা খোয়ানোর অভিযোগ নিয়ে সাধারণ মানুষ থানায় গেলে, প্রথমেই ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টালে অভিযোগ নথিভুক্ত  করতে হবে। এতে খোয়া যাওয়া টাকা ‘ব্লক’ করা সম্ভব। ফলে সাইবার দুষ্কৃতীরা সেই অর্থ অন্য অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলতে পারে না। ফলে টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হয়।  এর জন্য অবশ্য  প্রতারিত ব্যক্তিকে তড়িঘড়ি নিকটবর্তী থানায় ছুটে যেতে হবে। মাথায় রাখতে হবে, এই সময় প্রতিটি মিনিট অত্যন্ত মূল্যবান। 
  • Link to this news (বর্তমান)