এই সময়: দেশের রাজধানীতে বিজেপি জয়ী হলেও পশ্চিমবঙ্গে ওই ভোটের কোনও প্রভাব পড়বে না বলে দৃঢ় বিশ্বাসী তৃণমূল নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার যে ভাবে উন্নয়নের কাজ করে চলেছে তাতে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জোড়াফুলের জয় নিশ্চিত বলেও তৃণমূল নেতারা মনে করছেন।
একই সঙ্গে ইন্ডিয়া জোট পরিচালনা নিয়ে মমতা যে ফর্মুলা দিয়েছিলেন তা অনুসরণ করলে দিল্লির ফল অন্য রকম হতো বলেও তৃণমূল নেতাদের পর্যবেক্ষণ। ইন্ডিয়া জোট নিয়ে মমতার ফর্মুলা ছিল, যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী সেখানে সেই দলের উচিত বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করা। যদিও দিল্লিতে তা হয়নি।
বিজেপির বিরুদ্ধে আপ ও কংগ্রেস পৃথক ভাবে লড়াই করেছে। ত্রিমুখী লড়াইয়ে আপ পরাস্ত হলেও পশ্চিমবঙ্গে মমতা বারবার এই ত্রিমুখী লড়াই করেই জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। তাই দিল্লির জয় দেখে বঙ্গ বিজেপি নতুন উদ্যমে মাঠে নামতে চাইলেও তৃণমূল তাকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে নারাজ। কারণ, নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ–র নেতৃত্বাধীন বিজেপির প্রথম সারির সব নেতা ২০২১ সালে বাংলায় প্রচার করেও ঘাসফুলের দুর্গে দাঁত ফোটাতে পারেনি। ওই নির্বাচনের আগে শুভেন্দু অধিকারী সহ একদল নেতা জোড়াফুল ছেড়ে পদ্মে গেলেও তার কোনও প্রভাব পড়েনি ভোট–বাক্সে।
এমনকী, বাম–কংগ্রেস জোট গড়ে লড়াই করেও তৃণমূলের ভোট কাটতে পারেনি। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপি আরও দুর্বল হয়েছে। খাতায় কলমে বিজেপির আসন সংখ্যা ১৮ থেকে ১২ হলেও গেরুয়া শিবির যে এক ডজন আসনে জয়ী হয়েছে সেখানেও একাধিক কেন্দ্রে ক্লোজ–কনটেস্টে কোনও রকমে বিজেপি জয়ী হয়েছে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরবর্তী রাজ্যের প্রতিটি উপনির্বাচনে তৃণমূল জয়ী হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নরেন্দ্র মোদীর জমানায় প্রথমবার গেরুয়া ব্রিগেড দিল্লি দখল করায় বঙ্গ বিজেপির উল্লাসকে গুরুত্ব দিচ্ছে না রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ শনিবার বলেন, ‘২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল অন্তত ২৫০ টি আসন পাবে। চতুর্থবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লির কোনও প্রভাব এখানে পড়বে না। তৃণমূলের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়বে। ২০২৬ সালের পর রাজ্যের বিরোধী দলের মর্যাদাও পাবে না বিজেপি।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি জনতার সমর্থন অটুট থাকার পাশাপাশি আরও একটি কারণে তৃণমূল নেতৃত্ব আত্মবিশ্বাসী। দেশের প্রতিটি রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ সম্পূর্ণ পৃথক। একটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটের প্রভাব তার প্রতিবেশী রাজ্যেও পড়ে না। সাম্প্রতিক অতীতে পঞ্জাবে আপ জিতলেও হরিয়ানাতে বিজেপি জয়ী হয়েছে। উত্তরাখন্ডে বিজেপি জয়ী হলেও হিমাচলপ্রদেশে কংগ্রেস জিতেছে। ওডিশাতে বিজেপি প্রথমবার জয়ী হলেও কয়েক মাস পরে প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডে জেএমএম–কংগ্রেস জোট জয়ী হয়েছে। কর্নাটক ও তেলেঙ্গানাতে কংগ্রেস জয়ী হলেও অন্ধ্রপ্রদেশে আবার টিডিপি জিতে গিয়েছে।
রাজনীতির এই সমীকরণের কারণে দিল্লির ভোটের প্রভাব অতীতেও কখনও পশ্চিমবঙ্গে পড়েনি। দিল্লি তো দূরের কথা বিহার, ওডিশা, অসমের ভোটের প্রভাবও বাংলায় পড়তে দেখা যায়নি। যদিও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘বিহারে বিজেপি ঝড় হবে। অসমে তো জিতেই রয়েছি। আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য, আপ গিয়েছে এবার পশ্চিমবঙ্গের পাপ বিদায় করো।’ শুভেন্দুর এই মন্তব্য স্লোগান হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার করছে বিজেপি। দিল্লির ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরে কলকাতা, বাঁকুড়া, আসানসোল সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আবির খেলেছেন বিজেপি নেতা–কর্মীরা।
যদিও শুভেন্দুর স্লোগান নিয়ে কুণালের বক্তব্য, ‘এই স্লোগান আসলে তৎকাল বিজেপি–র উদ্দেশে আদি বিজেপি তৈরি করেছে। পরিষদীয় বিজেপি সংগঠন বিজেপিকে বলছে। এই স্লোগান বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলের প্রতিফলন।’ বিজেপির প্রচারের মোকাবিলায় তৃণমূলের নেতারাও ২০২৬ সালে জোড়াফুল ২৫০ আসন পাবে বলে পাল্টা প্রচার শুরু করেছেন। দিল্লির ভোটে মহুয়া মৈত্র, শত্রুঘ্ন সিনহা কয়েকটি আসনে আপের হয়ে প্রচার করেছেন।
এই পরাজয়ের পরে আপের আত্মপর্যালোচনা করা উচিত বলে মনে করছেন তৃণমূলের সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি এ দিন লেখেন, ‘গণতন্ত্রে ভোটাররা হলো শাসক। ভোটাররা যা বলবে তা সবাইকে শুনতে হবে। যাঁরা জয়ী হয়েছেন তাঁরা দায়িত্বের সঙ্গে ক্ষমতার ব্যবহার করুন। যাঁরা পরাজিত হয়েছেন তাঁরা হতাশ হবেন না, বরং আত্ম পর্যালোচনা করুন।’