• স্কুল বন্ধ হওয়ার ভয়, অসুস্থ শরীর নিয়েও হাজির একমাত্র শিক্ষিকা
    এই সময় | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • রনি চৌধুরী, ধূপগুড়ি 

    স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৫। আর দিদিমণি একজন। শুধু তাই নয়, প্রাক প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হয় একটি ঘরেই। এমনই অবস্থা ধূপগুড়ি ঘোষপাড়া বৈরাতীগুড়ি নিউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিতা দাসকে ক্লাস খোলা থেকে ঝাড় দেওয়া, সব কাজই করতে হয়।

    এককথায় জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সমস্তটাই তাঁর ঘাড়ে। স্কুলের এই বেহাল অবস্থার কথা জানেন এসআই থেকে ডিআই সকলেই। তবু স্কুলের হাল ফেরেনি।

    এতদিন তবু এ ভাবে জোড়াতাপ্পি দিয়ে চলছিল। কিন্তু গোল বেধেছে একমাত্র শিক্ষিকা অসুস্থ হওয়ায়। গত চার দিন থেকে অসুস্থ মিতা। জ্বর–সর্দি, কাশিতে ভুগছেন। তাই ছুটি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও ছুটি

    নিতে পারছেন না তিনি। কারণ, তা হলে বাচ্চাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। নিজের অসুস্থতার কথা স্কুল পরিদর্শককে জানিয়েছেন শিক্ষিকা। তবু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করলেন তিনি।

    চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ভূমি দাস বলে, ‘আমাদের স্কুলে একজন মাত্র শিক্ষিকা রয়েছেন। পিপি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত একটি ক্লাসরুমেই পড়ানো হয়। আমাদের পড়া বুঝতে খুব অসুবিধা হয়। ক্লাস রুম ঝাড় দেওয়া, বেল দেওয়া, পড়ানো সবকিছুই দিদিমণি করেন। আমরা সাহায্য করি।’

    তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সায়ন্তিকা ঘোষ, বলে, ‘একটা ঘরেই সবাইকে পড়ানো হয়। যখন ক্লাস ওয়ানের ছাত্রদের দিদিমণি পড়ায়, তখন সেই পড়া আমাদের শুনতে হয়। আবার যখন আমাদের পড়ায় তখন ক্লাস ওয়ানের ছাত্ররাও আমাদের পড়া শোনে। এর ফলে পড়াশোনা বুঝতে খুব কষ্ট হয়।’

    এক অভিভাবক শিউলি ঘোষ বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে স্কুলের অবস্থা বেহাল। সঠিক ভাবে পড়াশোনা হয় না। একজন মাত্র শিক্ষক। ৩৫ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। একটা ক্লাসে সবাইকে পড়ানো হয়। কেউ পড়া সঠিক ভাবে বুঝতে পারেনা। দ্রুত শিক্ষক দেওয়া প্রয়োজন। না হলে ছাত্র সংখ্যা আরও কমে যাবে।’

    এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘চারদিন থেকে আমার শরীর খারাপ। জ্বর–সর্দি, কাশিতে ভুগছি। ছুটি যে নেব, তার কোনও উপায় নেই। কেননা স্কুলে আমিই একমাত্র শিক্ষক। স্কুলের সবকিছু এক হাতে আমাকে সামলাতে হচ্ছে। আমার শরীর আর চলছে না। আমি ছুটি নিলেই স্কুলটা বন্ধ হয়ে থাকবে, সেই চিন্তাও আমাকে ভাবাচ্ছে।’

    এ বিষয়ে ধূপগুড়ির স্কুল পরিদর্শক তাপস দাস বলেন, ‘স্কুলের সমস্যার কথা আমরা জানি, দ্রুত শিক্ষক দেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে শিক্ষিকা যে অসুস্থ সেটা আমাদের জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

  • Link to this news (এই সময়)