এই সময়: দিন নেই, রাত নেই— সব সময়েই বেপরোয়া গাড়ির দাপট। অভিযোগ, প্রাণ হাতে রাস্তা পারাপার করতে হচ্ছে। আশঙ্কা সত্যি করে একদিন আগেই ওই রাস্তায় গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় একজনের। আর তাতে ভাঙে ধৈর্যের বাঁধ। রাস্তায় নেমে এসে শুরু হয় প্রতিবাদ। যাঁরা প্রতিবাদ দেখাচ্ছিলেন, তাঁরা সকলেই হবু ইঞ্জিনিয়ার, তায় আবার কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়া।
বার বার অভিযোগ জানিয়েও যখন কাজের কাজ হয়নি, তখন ছেনি, ইট নিয়ে পড়ুয়ারাই রাস্তার দখল নিলেন, তৈরি করে নিলেন স্পিড ব্রেকার। এমনই এক নজিরবিহীন প্রতিবাদের সাক্ষী রইল বিধাননগর।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড ক্যাম্পাসের সামনে বেপরোয়া গাড়ির হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে এ ভাবেই নিজেরাই রাস্তার উপরে স্পিড ব্রেকার তৈরি করে ফেললেন পড়ুয়ারা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড ক্যাম্পাস বিধাননগরে। সেখানেই হস্টেল।
পড়ুয়াদের অভিযোগ, অনেক দিন ধরে হস্টেলের সামনের রাস্তায় র্যাশ ড্রাইভিং হচ্ছে। প্রতিকার চেয়েও সুরাহা হয়নি, তাই পড়ুয়ারাই নেমে পড়েন বাম্পার তৈরি করতে। সম্প্রতি হস্টেলের সামনের রাস্তায় একটি গাড়ি পিষে দেয় এক ভবঘুরেকে। এতেই পড়ুয়াদের ক্ষোভ সপ্তমে ওঠে।
কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শুভাশিস শিট জানিয়েছেন, অনেক দিন ধরে হস্টেল, ক্যাম্পাস লাগোয়া এই সার্ভিস রোডে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চলছে। একাধিকবার বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট, পুরসভাকে স্পিড ব্রেকার ও র্যাশ ড্রাইভিং ঠেকানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
ওই ভবঘুরের মৃত্যুর পরে পথ অবরোধ শুরু করেন পড়ুয়ারা। তখন প্রশাসন জানায়, স্পিড ব্রেকার তৈরি হবে। তবে কিছু দিন সময় লাগবে। আর অপেক্ষা করেননি পড়ুয়ারা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শুভাশিসের মতো কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিনিয়র ছাত্ররা। তাঁরাই নেতৃত্ব দেন স্পিড ব্রেকার তৈরির কাজে। কয়েকজন শিক্ষকও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
তাই ঠাট্টা করে অনেকে পড়ুয়াদের বলেছেন, জীবনের প্রথম নির্মাণ কাজই শুরু হলো রাস্তায় স্পিড ব্রেকার তৈরি করে! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, হস্টেলের সামনে রাস্তায় র্যাশ ড্রাইভিং বন্ধ করার জন্য একাধিক বার তাদের তরফেও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। যদিও বিধাননগর পুরসভার ডেপুটি মেয়র (রাস্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত) অনীতা মণ্ডল বলেন, ‘আমার কাছে স্পিড ব্রেকারের জন্য কোনও আবেদন আসেনি। এলে অবশ্যই তা করা হতো।’