• বোধিলাভ কোটিপতি অমিতের, আর লটারি না-কাটার পণ পরিযায়ী শ্রমিকের
    এই সময় | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • পিনাকী চক্রবর্তী ■ ফালাকাটা

    হঠাৎ করেই হাতে চলে এসেছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। তারপরে অর্থহীন শব্দটা তাঁর কাছে বেশ অর্থবহ হয়ে উঠেছে। তিনি বিলক্ষণ জানেন, অর্থই অনর্থ ডেকে আনে। আর সেই অর্থ যদি ফের লটারির পিছনে ছোটে তা হলে তো কথাই নেই!

    লটারি কেটে কোটিপতি হওয়ার পরে ফালাকাটার অমিত বর্মন বলছেন, ‘অনেক কিছুই করার ইচ্ছে রয়েছে। তবে লটারি জেতার পরে আমার প্রথম পণ— জীবনে আর কখনও লটারির টিকিট কিনব না।’ হঠাৎ এমন বোধোদয়? অমিতের কথায়, ‘ভাগ্য তো বটেই, তার চেয়েও বড় কথা ঈশ্বরের আশীর্বাদে লটারি জিতেছি। এটাই যথেষ্ট। লটারির নেশায় এই টাকা কিছুতেই নষ্ট করব না।’ যা শুনে পড়শিরা প্রশংসা করছেন অমিতের। তাঁরা জানান, বহু লোক লটারির টিকিট জিতেও টাকা ধরে রাখতে পারেননি। আরও টাকার লোভে একটা সময়ে লটারির নেশায় সর্বস্বান্ত হয়ে সব হারিয়েছেন। অমিত সেই পথে হাঁটবেন না জেনে তাঁরা খুশি।

    গ্রামে তেমন কাজ নেই। ব্যবসা করার মূলধন নেই। অগত্যা কেরালাযাত্রা। শ্রমিকের আগে বসে গেল ‘পরিযায়ী’ তকমা। সেখান থেকেই টাকা পাঠাতেন সংসারে। তারপরেও সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যেত। ছুটিতে বাড়ি এসেও বসে থাকতেন না। সংসারে সামান্য শ্রী ফেরাতে গ্রামেও দিনমজুরি করতেন। আর কখনও-সখনও ভাগ্য যাচাই করতে কিনে ফেলতেন লটারির টিকিট। অমিত কবুল করছেন, ‘জানতাম অভ্যাসটা ভালো না। আশা ছিল, যদি লেগে যায়।’

    সম্প্রতি কেরালা থেকে ফিরেছেন অমিত। শুক্রবার দুপুরে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে কেটে ফেলেন লটারির টিকিট। সন্ধ্যার পর থেকেই গ্রামে হইহই! এক্কেবারে কোটির অঙ্ক জিতেছেন যে! নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না অমিত। লটারির নম্বর মেলাতে গিয়ে তাঁর দৃষ্টি ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসে। চোখের জল মুছে তিনি দেখেন, তাঁর লটারি-সংবাদে বর্মনপুর গ্রামে শুরু হয়েছে অকাল-উৎসব!

    মুখে মুখে এই বার্তা চারদিকে রটে যেতেই দুশ্চিন্তায় পড়েন অমিতের গ্রামের লোকজন। কারণ, কোটিপতি হওয়ার চাবিকাঠি তো শুধুই ওই কয়েকটি কাগজের টুকরো। টিকিট যাঁর টাকা তাঁর। দুষ্টু লোকের তো অভাব নেই! তা হলে উপায়?

    গ্রামবাসীরাই একজোট হয়ে রাতভর লটারির টিকিট-সহ অমিতকে পাহারা দেন। ভোরের আলো ফুটতেই তাঁদের বেশ কয়েকজন অমিতকে নিয়ে সটান হাজির হন স্থানীয় থানায়।

    পুলিশের পরামর্শেই আগামী সোমবার পর্যন্ত অমিতকে অজ্ঞাতবাসে কাটাতে হবে। কেন? পুলিশ শুধু জানিয়েছে— সিকিওরিটি রিজ়ন! রণজিৎ বর্মন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘এটা ভেবে খুব আনন্দ হচ্ছে যে, এখন থেকে আমাদের মহল্লার নামের সঙ্গে কোটিপতি তকমাও জুটে গেল।’

    আর যাঁকে নিয়ে এতো হইচই সেই অমিত বলছেন, ‘বিশ্বাস করুন, এখনও ঘোর কাটছে না। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ছেড়ে আর কেরালা যাব না। লটারির টাকা দিয়ে বাড়িটার হাল ফেরাতে হবে। ছোটখাটো একটা ব্যবসাও শুরু করব। তবে প্রতিজ্ঞা করেছি, আর কখনও লটারির টিকিট কিনব না!’

  • Link to this news (এই সময়)