• কল্যাণীতে ফরেন্সিক টিম, উদ্বার হওয়া বাজি বইতে এল মিনি ট্রাক
    এই সময় | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, কৃষ্ণনগর: একঝলক দেখলে আপাত ভাবে শান্তই মনে হবে কল্যাণীর বাজি বিস্ফোরণের ঘটনায় ধৃত সাধন বিশ্বাস ওরফে খোকনকে। কিন্তু এই খোকন যে প্রায় ১৫ বছর ধরে বাজি ব্যবসায় হাত পাকাতে পাকাতে বাজিপাড়ার কেজো খোকন হয়ে গিয়েছেন, তা জানতেন কল্যাণীর অনেকেই। বিশেষ করে কল্যাণীর সাধারণ শ্রমজীবীরা জানতেন, খোকনের কাছে গেলে কাজ একটা মিলবেই। সে প্যাকেট বা বাক্স তৈরি হোক, কিংবা মাল পৌঁছে দেওয়া অথবা বাজি তৈরির কাজ। খোকনকে শনিবার কল্যাণী আদালতে তোলা হলে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। তাকে জেরা করে আরও তথ্য জানা যাবে বলে মনে করছে পুলিশ।

    শনিবার কল্যাণী রথতলায় বিস্ফোরণস্থলে আসেন তিন সদস্যের একটি ফরেন্সিক এক্সপার্ট টিম। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন তাঁরা। পোড়া ছাই কোদাল দিয়ে তুলে পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায় তাঁদের। নানা নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। ঘটনাস্থল থেকে দুটো বাড়ির পরেই খোকনের বাড়ি। তার বাড়ির খোলা ছাদে গুল–কয়লার মতো বস্তা বস্তা বাজি ও বাজি তৈরির সরঞ্জাম রাখা। বাড়ির পিছন দিকে গাছপালা ঘেরা অংশের এক কোণে যে ছাদে ওঠার সিঁড়ি, তা জানিয়ে দিলেন পাড়ার লোকেরাই। শুক্রবার রাতে শুধু খোকনের বাড়িই নয়, এলাকার আরও কয়েকটি বাড়ি থেকে প্রচুর শব্দবাজি ও বাজি তৈরির মশলা উদ্ধার করেছে কল্যাণী থানা। উদ্ধার হওয়া বাজির বস্তাগুলি এক জায়গায় করতে একটা ম্যাটাডোর লেগে যায় এ দিন।

    এলাকাবাসী বলছেন, ভাগ্যিস এলোমেলো হাওয়া ছিল না সেই সময়ে। নইলে বিস্ফোরণস্থল থেকে আশপাশের বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ত। কল্যাণীর প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএম–এর শান্তনু ঝা শনিবার ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, ‘ওই টিনের চালাঘরে পাঁচ জন নয়, ১১ জন শ্রমিক কাজ করতেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। দুপুরে দুর্ঘটনা হওয়ায় কেউ বাড়িতে বা বাইরে খেতে গিয়েছিলেন। না–হলে মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো আরও বাড়ত।’ এ দিন এলাকায় যান স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও। দুর্ঘটনায় জখম মহিলাকে হাসপাতালে দেখতেও যান তিনি। বিজেপির শহর মণ্ডল নেতা শুকদেব মাইতি ও কল্যাণীর প্রাক্তন পুরপ্রধানের অভিযোগ, কল্যাণীর এই এলাকা লাগোয়া পঞ্চায়েতগুলিতেও বেআইনি বাজির কারবার আছে।

    নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্সের পক্ষে কেশবলাল কর বলেন, ‘কল্যাণী এবং লাগোয়া উত্তর চব্বিশ পরগনা ও হুগলি জেলা সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় বাজির কারবার রয়েছে। তুবড়ি বানানোর মাটির খোল তৈরি থেকে শুরু করে, বাজির বাক্স, মোড়ক তৈরির কাজেও বহু মানুষ যুক্ত। ঠিক জায়গা নির্বাচন করে বাজি ব্যবসার বৈধ কারবারগুলোকে একত্রিত করে, বাজি কারখানার শিল্পগুচ্ছ বা ক্লাস্টার গড়ে দেওয়া হোক।’

  • Link to this news (এই সময়)