• ওঠেনি ধর্মঘট, জঞ্জালের স্তূপে নাভিশ্বাস বাসিন্দাদের
    এই সময় | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সাত দিন অতিক্রান্ত হলেও মিটল না বালি পুরসভার ঠিকাদারের অধীন সাফাই কর্মীদের ধর্মঘট। ফলে, একদিকে যেমন রাস্তায় পাহাড়–প্রমাণ জমছে জঞ্জাল, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধও। বাড়ি–বাড়ি জঞ্জাল সংগ্রহ না হওয়ায় নাগরিকদের বাড়িতেও জমে উঠছে জঞ্জাল।

    গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে বালি পুরসভার ৩৫ ওয়ার্ডে বাড়ি থেকে জঞ্জাল সংগ্রহ বন্ধ রেখেছেন সাফাই কর্মীরা। একই সঙ্গে বেলুড় পঞ্চায়েত এলাকায় চাঁদমারিতে বালি পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে কাজ বন্ধ করেছেন পুর সাফাই কর্মীরা। পঞ্চায়েত এলাকার জঞ্জালও জমে রয়েছে। সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না জঞ্জালের গাড়ি।

    ফলে অচলাবস্থায় কার্যত নাভিশ্বাস উঠেছে নাগরিকদেরই। অনেকেই বাড়ির জমা জঞ্জাল নিয়ে গিয়ে ফেলছেন রাস্তায়। যা বাঁশি বাজিয়ে সংগ্রহ করার কথা সাফাই কর্মীদের।

    গত ১৭ বছর ধরে এই ব্যবস্থাই চলে আসছে বালি পুরসভায়। জঞ্জাল সংগ্রহের জন্য নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থার সাফাই কর্মীরা ভোর হলেই বাঁশি বাজিয়ে পাড়ায় নির্দিষ্ট রুটে ঘুরতেন। নাগরিকদের বাড়িতে পরিবার পিছু দেওয়া হয়েছিল পচনশীল জঞ্জাল ও অপচনশীল কঠিন বর্জ্যের জন্য আলাদা আলাদা পাত্র। সেই পাত্রে জমা করা জঞ্জাল বাড়ির লোক পুরসভার জঞ্জাল সংগ্রহের হাতগাড়িতে একই ভাবে রাখা পৃথক পাত্রে ফেলতেন। সেখান থেকে এলাকার একটি জায়গায় হাতগাড়ি থেকে পুরসভার বড় কন্টেনার ভ্যাটে পচন ও অপচনশীল জঞ্জাল আলাদা ভাবে জমা করে, সেইসব গাড়ি কাপলিং করে ট্র্যাক্টর দিয়ে টেনে চাঁদমারি ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়া হতো।

    এত বছর ধরে চলা ব্যবস্থায় অনেক ফাঁকফোকর ও কিছু বেনিয়ম দেখা যাচ্ছিল গত কয়েক বছর ধরেই। সংগৃহীত জঞ্জালের পরিমাণ বেশি হওয়ায় অনেক সময়েই নানা এলাকায় মাঝেমাঝেই জঞ্জালের স্তূপ জমে দুর্গন্ধ ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। তবে নতুন করে সমস্যার সূত্রপাত পুরসভার সাম্প্রতিক নতুন ব্যবস্থায়। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বালি পুরসভা দুই ঠিকাদার সংস্থাকে জানিয়ে দেয়, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সাফাই কর্মীদের বেতন দেওয়ার দায়িত্ব থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। পরিবর্তে, সাফাই কর্মীদের সরাসরি বেতন দেবে পুরসভা। এতেই বেঁকে বসেন দুই ঠিকাদার সংস্থার অধীনে থাকা সাফাই কর্মীরা।

    পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর থেকে সুডা অর্থাৎ স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে ‘নির্মলবন্ধু’ ও ‘নির্মলসাথি’ কর্মী নিয়োগ করে তাঁদের মাধ্যমে জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য ‘নির্মল বাংলা’ প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। সরাসরি এই প্রকল্পে কর্মীদের দিনপ্রতি মাত্র ২১০ টাকা করে বেতনে মাসে ২৬ দিন কাজ করার কথা বলা হয়েছে। এতে একজন সাফাই কর্মীর মাসে সর্বোচ্চ আনুমানিক সাড়ে ৫ হাজার টাকা রোজগার হতে পারে। যদি একজন নির্মলবন্ধুর সঙ্গে তাঁরই পরিবারের একজন নির্মলসাথী কর্মীকে কাজ দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে পরিবারপিছু আরও কিছু বেশি রোজগার তাঁদের হতে পারে।

    কিন্তু এতে খুশি নন সাফাই কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা ঠিকাদার সংস্থার কাজে মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা বেতন পান। প্রাপ্য ছুটিও নিতে পারেন। কিন্তু ‘নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে তাঁদের ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি, তাঁরা এখন ঠিকাদার সংস্থার কাছে কাজ করে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ইএসআইয়ের মত স্বাস্থ্য প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। এই সব সুবিধা নেই নির্মল বাংলায়। ফলে কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন তাঁরা।

    এ দিকে বালি পুর কর্তৃপক্ষের যুক্তি, সাফাই কর্মীদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। নির্মল বাংলায় কাজ করলে তাঁদের কোনওরকম আর্থিক ক্ষতি হবে না। এখন যাঁরা দাবি করছেন তাঁরা মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করেন, তাঁরা তো হাতে পান মাত্র প্রায় ৮ হাজার টাকা। নির্মল বাংলায় যদি পরিবার পিছু একজন নির্মলবন্ধু ও একজন নির্মলসাথি কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন। কিন্তু সাফাই কর্মীদের পাল্টা প্রশ্ন, তাঁদের যে টাকা এখন কাটা হয়, তা তাঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা হয়। এতে তাঁরা ভবিষ্যতে উপকৃত হবেন। ভবিষ্যতের কী নিশ্চয়তা রয়েছে নির্মল বাংলায় কাজ করে?

    এই টানাপোড়েনেই এখন নাভিশ্বাস উঠেছে বালি পুর এলাকার নাগরিকদের। এ দিন বালি পুরসভার প্রশাসক ও হাওড়ার মহকুমা শাসক অমৃতা বর্মন রায় বলেন, ‘যাঁরা কাজ বন্ধ রেখেছেন, তাঁরা পুরসভার কর্মী নন। আমরা আজ থেকেই জঞ্জাল সরানোর কাজ শুরু করেছি। বেশ কয়েকদিন জঞ্জাল পরিষ্কার না হওয়ায় অনেক জঞ্জাল জমে গিয়েছে। ৩-৪ দিন সময় লাগবে সরাতে। পঞ্চায়েত এলাকার জঞ্জালও সরানো হয়েছে।’ কিন্তু বালি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রদীপ ভাওয়ালের দাবি, এ দিনও তাঁর এলাকায় প্রচুর জঞ্জাল জমা হয়ে রয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)