এই সময়, দত্তপুকুর: হজরত লস্কর খুনের বেশ কিছু তথ্য জানতে ধৃত সুফিয়া খাতুনের ফোনটাই এখন তুরুরপের তাস তদন্তকারীদের। খুনের আগে সুফিয়ার পলাতক স্বামীর সঙ্গে হজরতের কথা হয়েছিল। খুনের পরেও সুফিয়া ফোনেই কথা বলে তার পলাতক স্বামীর সঙ্গে। তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল, সেটা জানতেই ধৃত সুফিয়ার ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে দত্তপুকুর থানার পুলিশ।
ফোন বাজেয়াপ্ত করার পরেই তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সুফিয়া তার পলাতক স্বামীর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ কলে কথা বলেছিল। কিন্তু গ্রেপ্তারের আগেই হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সমস্ত তথ্য ডিলিট করে দেয় সুফিয়া। তাই ওই ফোন ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ দিকে, ধৃতদের জেরা করেও খুনের ছ’দিন কেটে যাওয়ার পরেই নিহত যুবক হজরত লস্করের কাটা মাথার হদিস পায়নি দত্তপুকুর থানার পুলিশ। তবে, ধৃত তিনজনকে আলাদা আলাদা এবং মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করে বেশ কয়েকটি সূত্র হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। সেই সূত্র ধরেই খুনে বাকি অভিযুক্ত–সহ কাটা মাথার হদিস পাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।
গত রবিবার গভীর রাতে দত্তপুকুর থানার বাজিতপুর এবং মালিয়াকুর গ্রামের মধ্যবর্তী অংশের চাষের জমিতেই মুণ্ডহীন অবস্থায় হজরত লস্করের দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ইতিমধ্যেই খুনের ঘটনায় দুই মহিলা–সহ নিহত যুবকের মামাতো ভাই ওবায়দুল গাজিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের ধারণা, ধৃত সুফিয়া খাতুনের দ্বিতীয় পক্ষের স্বামীকে দিয়ে ফোন করিয়ে গাইঘাটা থেকে দত্তপুকুরে হজরতকে নিয়ে এসেছিল ওবায়দুল। খুনের আগে সুফিয়া খাতুনের সেফ হাউসেই হজরতকে রাখা হয়েছিল। পরে রবিবার গভীর রাতে ওই সেফ হাউস থেকেই হজরতকে চাষের জমিতে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়।
জানা গিয়েছে, খুনের আগেও হজরতের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল ধৃত সুফিয়ার দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী। এ ছাড়াও পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, হজরত খুনের পর পলাতক স্বামীর সঙ্গে ফোনেই কথা বলেছে সুফিয়া। তাঁর সঙ্গে কী কথা হয়েছে, আর কারও সঙ্গে সুফিয়া কথা বলেছিল কি না, সেটা জানতেই সুফিয়ার মোবাইল ফোন সিজ করে পুলিশ। তার ফোন ঘেঁটে পুলিশ জানতে পারে, পলাতক স্বামীর সঙ্গে খুনের পর হোয়াটসঅ্যাপ কলে কথা বলেছিল সুফিয়া। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই হোয়াটসঅ্যাপ কলেই হজরত খুনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ কল সম্পর্কিত কোনও তথ্যই জেরায় স্বীকার করতে চাইছে না সুফিয়া। ফলে তার ফোন ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠিয়ে সে খুনের পর কার কার সঙ্গে কথা বলেছিল, সেটাই জানতে চাইছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত তিনজনকে মুখোমুখি বসিয়ে ও তিনজনকে আলাদা আলাদা ভাবে জেরা করে কিছু তথ্যের ভিত্তিতে নিহত যুবকের কাটা মাথার খোঁজ করছে পুলিশ।
এই প্রসঙ্গে বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া বলেন, ‘ধৃত সুফিয়া তাঁর পলাতক স্বামীর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ কলে কথা বলেছিল নিজেকে সেফ পজিশনে রাখতে। ওর ফোন সিজ করেছি। কাটা মাথার খোঁজ চলছে। আশা করছি, খুব দ্রুত সেটা সম্ভব হবে।’