এই সময়, কাটোয়া: মোটর বাইক চালানোর সময়ে বাধ্যতামূলক ভাবে হেলমেট পরার পুলিশি প্রচারে আদৌ কি কোনও সচেতনতা তৈরি হচ্ছে? বৃহস্পতিবার রাতে তরুণ সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু এই প্রশ্নকে আরও জোড়ালো করল। ওই রাতে দুর্ঘটনায় মৃত সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও গুরুতর জখম তাঁর বন্ধুর কারও মাথাতেই ছিল না হেলমেট। জেলার পদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের আক্ষেপ করে জানাচ্ছেন, সচেতনতা আসলে পরিণত মানসিকতার লক্ষণ। সেই মানসিকতার অভাবেই অকালে ঝরে যাচ্ছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। শিক্ষিতদের মধ্যেও সচেতনতা গড়ে না উঠলে তা খুবই হতাশার।
বৃহস্পতিবার রাতে গুসকরায় পিকনিক সেরে মঙ্গলকোটের রামনগরের বাড়িতে ফেরার পথে বাইক দুর্ঘটনায় মারা যান বছর ২৫–এর অয়োনাভ গঙ্গোপাধ্যায়। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বর্ধমান–সিউড়ি ২ বি জাতীয় সড়কে একটি গাড়ি তাঁদের বাইকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অয়োনাভর। গুরুতর আহত হন বাইকে থাকা তাঁর বন্ধু বাঁকুড়ার কোতুলপুরের বাসিন্দা রাহুল সরকার। চিকিৎসার জন্য তাঁকে আনা হয় কলকাতায়। দুর্ঘটনার সময়ে তাঁদের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না বলে জানা গিয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘দুর্ঘটনা রোখা না গেলেও, হেলমেট থাকলে ক্ষতি তো অনেকটাই আটকে দেওয়া যায়। জানি না মানুষ এটা কবে বুঝবে।’
বস্তুত, পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ থেকে শুরু করে বছরভর হেলমেট পরে বাইক চালানোর বার্তা দেয় পুলিশ। এর জন্য নানা অভিনব পন্থার আশ্রয়ও নেওয়া হয়। কখনও গোলাপ ফুল, কখনও হেলমেটও তুলে দেওয়া হয় চালকদের হাতে। এমনকী স্কুলের ছাত্র–ছাত্রীরাও প্রচারে নামে। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। জেলার অ্যাডিশনাল এসপি (ট্র্যাফিক) সুজিত মিত্র বলেন, ‘আমরা বার বার হেলমেট পরার কথা বলছি। সচেতনতার প্রচারও চালানো হয়। পথ নিরাপত্তা নিয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত।’
পড়াশোনায় কৃতী ছাত্র অয়নাভ চাকরি পেয়েছিলেন একটি আমেরিকান সফ্টওয়্যার সংস্থায়। বাড়ি থেকেই চাকরি করতেন তিনি। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছিল তাঁর সামনে। কিন্তু, সচেতনতার অভাবে তাঁর অকালপ্রয়াণে সমাপ্তি ঘটল সমস্ত সম্ভাবনার। গুসকরা ফাঁড়ির ওসি সৌরভ দত্ত বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমরা কোনও হেলমেট পাইনি। আমরা প্রচার করেও হেলমেট পরাতে পারছি না। হেলমেট থাকলে হয়তো প্রাণে বেঁচে যেত ছেলেটি। যে গাড়িটি ধাক্কা মেরেছে সেটির খোঁজ চলছে।’