অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিগর্ভ নারকেলডাঙা। প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগে রবিবার সকাল থেকেই এলাকাবাসী বিক্ষোভে সামিল হয়েছে। সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তায় নেমে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন তাঁরা। রবিবার সকালেঘটনাস্থলে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম পৌঁছতেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। তাঁর কাছেই স্থানীয় কাউন্সিলর শচীন সিংহের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেন বাসিন্দারা। রাজনীতি ভুলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন ফিরহাদ। মেয়র বলেন, সেচের জমিতে ওঁরা অনেক দিন ধরেই থাকছিলেন। গরিব মানুষদের সঙ্গে আমরা আছি। সরকারি নিয়ম মেনে যা করার করব। সেচ দপ্তত যদি অনুমতি দেয়, তবে ওখানে বাংলার বাড়ি হতে পারে। কী কারণে আগুন লাগল, তা দমকলই বলতে পারবে বলে জানান মেয়র।
মেয়র এলাকা ছাড়তেই পরিস্থিতি ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। স্থানীয় কাউন্সিলর শচীন সিং অনুগামীদের নিয়ে পৌঁছে যান একেবারে নারকেলডাঙা থানায়। সেখানেই ধরনায় বসে পড়েন তিনি। অপর পক্ষও থানায় হাজির হয়। দুই পক্ষকে নিরস্ত্র করতে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাউন্সিলর অবৈধভাবে তোলা তোলেন। টাকার বিনিময়ে বেআইনি ভাবে দোকান, ঝুপড়ি করার অনুমতি দিতেন তিনি। যদিও সেই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলর। ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শচীন সিংয়ের আবার পালটা অভিযোগ, এভাবে উত্তেজনা ছড়ানোর নেপথ্যে রয়েছে এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী পাপ্পু খান ও তার দলবল। তাঁরা কাউন্সিলরকে খুনের চক্রান্ত করছে। নিরাপত্তা না পেলে থানার সামনে থেকে সরবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
শুক্রবার রাতে নারকেলডাঙ্গা বস্তিতে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই ৫০-টিরও বেশি ঝুপড়ি। এই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। রবিবার সকালে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে ঝুপড়ির ভিতর থেকে। প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, বস্তির বেশিরভাগ ঝুপড়িতে প্রচুর পরিমাণে দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে মুহূর্তের মধ্যে ভয়াবহ আকার নেয় আগুন। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের নাম হাবিবুল্লা মোল্লা (৫৫)। স্থানীয়দের দাবি, হাবিবুল্লা ঝুপড়িতে নিজের ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। আগুন দ্রুত বিধ্বংসী আকার নেওয়ায় তিনি ঘর থেকে বেরোতে পারেননি। কী কারণে এই আগুন লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দমকলের বিরুদ্ধে দেরিতে আসার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, শনিবার রাত ১০টা নাগাদ হঠাৎ আগুন লাগে খালপাড়ের ধারে নারকেলডাঙ্গা বস্তিতে। অত্যন্ত ঘনজনবসতিপূর্ণ অঞ্চল হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ৩০টির বেশি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। আগুনের প্রকোপ এতটাই বেশি ছিল যে রাস্তার পাশে থাকা একটি ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছয় দমকল। নারকেলডাঙায় গিয়েছিল দমকলের ১৬টি ইঞ্জিন। প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে রাত ২টো ১০ মিনিটে। আগুন নিভে গেলেও রবিবার সকালে এলাকায় ধোঁয়া রয়েছে।
রাতে আগুন নেভাতে দমকল কর্মীদের সঙ্গে হাত লাগান স্থানীয় বাসিন্দারাও। বস্তির বাসিন্দারা গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে মৃত হাবিবুল্লার ঘরের এলাকা ব্যারিকেড করে রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের অনুমান, ঝুপড়ির পাশে বড় ট্রাক দাঁড় করানো ছিল। ট্রাকের মধ্যে অনেক কার্টুন মজুত ছিল। সেখান থেকে আগুন ছড়িয়েছে বলে তাঁদের দাবি। কাপড়ের ছাঁট, জুতোর ছাঁট মজুত ছিল অনেক ঝুপড়িতে। সেগুলি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। দমকলের তরফে আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখা হবে। এলাকায় প্রচুর পরিমাণে দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল বলে দাবি। রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন এলাকার কাউন্সিলর। তিনি জানান, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আগুন লাগার অন্তত দু’ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে যায় দমকল। তত ক্ষণে আগুন অনেকটা ছড়িয়ে পড়েছিল। অথচ, যেখানে আগুন লেগেছে, সেখান থেকে দমকলের দপ্তর খুব বেশি দূরে নয়। বাসিন্দাদের দাবি অনুযায়ী, ওখানে ২০০টি ঝুপড়ি ছিল। তার মধ্যে ৫০টির বেশি ঝুপড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। কীভাবে এই আগুন লাগল তা এখনও জানা যায়নি। প্রাণে বাঁচলেও আগুনের গ্রাসে কার্যত সবকিছু খুইয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।