পুজো ও সামাজিক কাজে অগ্রণী কেশপুরের ঝেঁতলা ঐক্য সম্মিলনী
বর্তমান | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রাজদীপ গোস্বামী, কেশপুর: একসময় রাজনৈতিক হানাহানিতে সংবাদ শিরোনামে থাকত কেশপুর। বন্যা পরিস্থিতির জেরে বিস্তীর্ণ এলাকা থাকত জলের নীচে। সেই পরিস্থিতিতে সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে মানবসেবার পথ বেছে নেয় কেশপুরের ঝেঁতলা এলাকার ঐক্য সম্মিলনী ক্লাব। সূচনালগ্ন থেকেই মানবসেবার পাশাপাশি দুর্গাপুজো করেও মানুষের মন জয় করে।
ক্লাবের সম্পাদক বিকাশ চৌধুরী ও সভাপতি সোমনাথ দণ্ডপাট বলেন, আমাদের ক্লাবের সীমিত সামর্থ্য। তবুও মাতৃ আরাধনার পাশাপাশি সমাজ কল্যাণমূলক কাজে আমরা যুক্ত থাকি। সকলের সহযোগিতা ছাড়া বড় মাপের পুজো ও সামাজিক কাজ করা সম্ভব নয়। ক্লাবের শুভানুধ্যায়ী প্রদ্যোৎ পাঁজা বলেন, এই ক্লাবের সদস্যরা সারা বছর ধরেই নানা সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি নিয়ে থাকেন। এরফলে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হন। কেশপুর এলাকায় এই ক্লাব সত্যিই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কেশপুর ব্লকের প্রান্তিক জনপদ ঝেঁতলা। একসময় এলাকায় সেভাবে দুর্গাপুজো হতো না। তাই মন খারাপ হতো আট থেকে আশি সকলের। জনশ্রুতি রয়েছে, স্থানীয় একটি পরিবার সঠিকভাবে দুর্গাপুজোর আয়োজন না করায় সবংশে ধ্বংস হয়েছে। তাই একটা ভীতি বরাবর কাজ করত গ্রামবাসীদের মনে। এছাড়া ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির জেরে পুজো করার সাহসটুকু পেত না সাধারণ মানুষ। গ্রামের মানুষদের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে পুজো দেখতে যেতে হতো। স্থানীয় যুবক সুশান্ত বরম, শান্তনু চৌধুরী, তুলসী পাতরদের উদ্যোগে ১৯৯৮ সাল নাগাদ পুজো শুরু হয়। সেইসময় কেশপুরজুড়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষ লেগেই থাকত। এলাকায় থমথমে পরিবেশ থাকত। দোসর ছিল বিধ্বংসী বন্যা। কার্তিক মাসের শুরুতেও জল থই থই করত চারিপাশ। তবুও দুর্গাপুজোর উন্মাদনায় ভাসত এলাকা। আজও পুজোর জৌলুস ও উন্মাদনা কমেনি। ক্লাবের সহ সম্পাদক সুদীপ চক্রবর্তী, সহ সভাপতি পঞ্চানন জানা বলেন, পুজোর জন্য আমাদের ক্লাব ‘বিশ্ববাংলা শারদ সম্মান’, ‘জঙ্গলমহল উদ্যোগ’, ‘বিবেক পথে’ সম্মান পেয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক কাজেও এগিয়ে আসেন ক্লাবের সদস্যরা। প্রতি বছর ক্লাবের সদস্যদের উদ্যোগে দুর্গাপুজোর পঞ্চমীতে রক্তদান শিবির, দুঃস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের কেরিয়ার গাইডেন্স, নতুন বস্ত্রদান, বৃক্ষরোপণে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করা হয়। একইসঙ্গে পড়ার অভ্যাস ও সৃজনীশক্তি বিকাশে বাৎসরিক প্রয়াস পত্রিকা প্রকাশ করেন ক্লাবের সদস্যরা।
আগামী দিনে ক্লাবের সদস্যদের উদ্যোগে বিশ্ব নারী দিবস পালন, শিশু ও মেয়েদের জন্য স্বাস্থ্যপরীক্ষা, সবুজায়নের লক্ষ্যে বনমহোৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। প্লাস্টিকমুক্ত পরিবেশ গড়তে এলাকায় সেমিনার করার পরিকল্পনা করেছে ক্লাবের সদস্যরা।
ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ অমিয় সেন ও সদস্য ভাস্কর চৌধুরী বলেন, মানুষের পাশে থাকাই মূল কর্তব্য। আমাদের ক্লাবের মূলমন্ত্র একতা।-নিজস্ব চিত্র