• হিলিতে টাকা ফেললেই বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভুয়ো আধার কার্ড
    বর্তমান | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বালুরঘাট: হিলিতে টাকা দিলে মিলছে আধার, ভোটার, প্যান কার্ড। এই চক্রের বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হতেই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। তদন্তকারীদের অনুমান, দালালদের সঙ্গে আধার সেন্টারগুলির কর্মীদের যোগসাজশ রয়েছে। কীভাবে তৈরি হয় আধার? তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, প্রথমে বাংলাদেশের যে ব্যক্তি এদেশের আধার কার্ড তৈরি করবে তাদের নাম, ছবি নেওয়া হয়। তারপর খোঁজ শুরু হয় ভাড়াটে মা, বাবার। সীমান্ত এলাকার দুঃস্থ পরিবারের সদস্যদের ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে তাদের মা বাবা বানিয়ে আধার সেন্টার গুলিতে নিয়ে যাওয়া হয়। তার আগে দালালদের হাত ধরে অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে এপারে ‘কাস্টমার’দের নিয়ে আসা হয়। তাদের থাকা খাওয়ার সুবন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়। গত একমাসে ভুয়ো আধার কার্ড তৈরির অভিযোগে হিলি থানা ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। হিলি থানার আইসি শীর্ষেন্দু দাস বলেন, ভুয়ো আধার তৈরি হচ্ছে হিলিতে। ইতিমধ্যে আমরা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ভুয়ো আধার তৈরির চক্রে আরও কয়েকজন জড়িত। পুরো বিষয়টি নজর পুলিসের নজরে।


    তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, অনুপ্রবেশকারীরা হিলিতে এসে কয়েকবছর গোপনে থাকছে। দালালরা আধার ও অন্য নথি বানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সুযোগ বুঝে টাকা নিচ্ছে। কারও কাছে আবার মোটা টাকা নেওয়া হচ্ছে। দালালরাই ভাড়াটে মা-বাবা খুঁজে বাংলাদেশিদের আধার কার্ড বানিয়ে দিচ্ছে। পরে ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য আবেদন করে দিচ্ছে। অভিযোগ, এলাকার দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মীরা সব কিছু জানলেও হেয়ারিংয়ের দিন তাঁরা চুপচাপ থাকছে। যার ফলে বাংলাদেশ থেকে এপারে এসে ভাড়াটে মা বাবাদের দিয়ে সহজে এদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া যাচ্ছে। জেলার বালুরঘাট হিলি ব্লকের পাশাপাশি গঙ্গারামপুরে এমন বহু বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে এদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছে। খোদ বালুরঘাট শহরে একাধিক ওয়ার্ডে বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে এসে ভাড়াটে মা বাবা বানিয়ে পাকাপাকিভাবে অনেকে জায়গা কিনে বাড়ি করে থাকছে। অন্যদিকে সীমান্ত এলাকায় পাচারের সুবিধার্থে ভাড়াটে মা বাবা বানিয়ে নাগরিকত্ব নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। 


    সূত্রের খবর, একজনকে বাবা বানিয়ে ৬-৭ জন এদেশে নাগরিক হয়েছে। এর পরে একাধিক সরকারি কর্মীদের ধরে ভাড়াটে বাবা, মায়ের নাম সরিয়ে  সেখানে মৃত ব্যক্তির নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একাজে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ভাড়াটে বাবা মায়ের তথ্য দিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলার সময় অনেকে ধরা পরে এবং তাদের আবেদন বাতিল করা হলেও কারও বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। এই অবৈধ কারবার চলছে ব্লকের বিভিন্ন ক্যাফে থেকে। কয়েকদিন আগে এমনই একটি ক্যাফে থেকে বহু নথি সহ এক দোকান মালিক পেশায় স্কুল শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। এই কারবার বন্ধ করতে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিস। জেলা পুলিস সুপার চিন্ময় মিত্তাল, অভিযোগ পেলেই অভিযান চলছে। গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে।   
  • Link to this news (বর্তমান)