• কলেজের খরচ চালাতেই হিমশিম, তাই জমি বিক্রি
    বর্তমান | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • শ্রীকান্ত পড়্যা, তমলুক: এক বছরের মধ্যে এগরা সারদা শশীভূষণ কলেজের মোট ৩২৪ ডেসিমল জমি বিক্রি করা হয়েছে। কলেজের গভর্নিং বডিতে রেজ্যুলিউশন করেই ওই জমি বিক্রি করা হয়েছে। রবিবার ‘বর্তমান’ পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে এমনই বিস্ফোরক দাবি করেছেন সদ্য অবসর নেওয়া অধ্যক্ষ দীপককুমার তামলি। অধ্যক্ষ হিসেবে জমি বিক্রিতে সই করেছেন তিনি। কলেজের অর্থ সঙ্কট মেটাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যদের অজ্ঞাতসারে এই কাজ হয়নি। রীতিমতো রেজ্যুলিউশন করেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, সেই রেজ্যুলিউশন কনফার্মেশন করা হয়নি বলেও অধ্যক্ষের দাবি। 


    ২০২৪সালে এগরা সারদা শশীভূষণ কলেজে ন্যাকের ভিজিট হয়। ন্যাকের টিম আসার আগে কলেজে রং করা, টয়লেট, সাইকেল স্ট্যান্ড তৈরি সহ নানা কাজে প্রায় ১ কোটি ২২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। জমি বিক্রি থেকে পাওয়া টাকার একটা বড় অংশ ওই খাতে খরচ করা হয়েছে বলে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দাবি। ন্যাকের মূল্যায়নে কোনওরকমে ‘বি গ্রেড’ পেয়েছে এগরা কলেজ। এই মুহূর্তে কলেজে ৩২জন অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা। তাঁদের বেতন দিতে মাসে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হয়। কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকেই বেতন দিতে গিয়ে আর্থিক সঙ্কটে পড়তে হয়েছে। তাই জমি বিক্রি প্রয়োজন ছিল বলে অধ্যক্ষের দাবি। গত ৩১ জানুয়ারি অধ্যক্ষ অবসর নেন। সেদিন কলেজের অ্যাকাউন্টে আট লক্ষ টাকা জমা ছিল।


    কলেজের একাংশের বক্তব্য, জমি বিক্রির দায় গভর্নিং বডি এড়াতে পারে না। কারণ, কমিটির সভায় রেজ্যুলিউশন করে জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। কম দামে বিক্রির জন্য কমিটির প্রত্যেককে জবাবদিহি করতে হবে। অনেকেই কলেজের গভর্নিং বডি ভেঙে গোটা ঘটনার তদন্তের দাবি তুলেছেন। কারণ, জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত গভর্নিং বডিতে হয়েছে। সেই কমিটি থাকাকালীন তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। দেদার জমি বিক্রির পাশাপাশি কলেজের মাঠ বরাবর কিছু রায়ত জমি কেনার জন্য এক বছর আগে বায়নানামা করেছিল এগরা কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, আর্থিক কারণে কিনতে পারেনি। এই অবস্থায় কলেজের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনজন জমি মালিক। মাত্র এক বছরে কলেজের নামে থাকা ৩২৪ ডেসিমল জমি বিক্রি করার ঘটনা ঘটেছে। গত ২৮ জানুয়ারি দুই তৃণমূল নেতার আত্মীয়কে রাজ্য সড়কের ধারে জমি রেজিস্ট্রির ঘটনা সামনে আসে। কিন্তু, তার আগে থেকেই জমি বিক্রির ঘটনা ঘটছে। সদ্য প্রাক্তন ওই অধ্যক্ষ বলেন, প্রায় ১০ জনকে ৩২৪ ডেসিমল জমি বিক্রি করা হয়েছে। সেই টাকায় ন্যাক ভিজিট উপলক্ষ্যে পরিকাঠামো খাতে এবং অস্থায়ী কর্মীদের মাইনে দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। অবসরের দিন অ্যাকাউন্টে আট লক্ষ টাকা ছিল।


    কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি তরুণকুমার মাইতি বলেন, দীপককুমার তামলি এখন কলেজের কেউ নন। সুতরাং তিনি কী বললেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গোটা ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের জন্য মহকুমা শাসককে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)