• স্কুলে আধুনিক পরিকাঠামো গড়তে বেতনের টাকায় উন্নয়ন তহবিল হলদিয়ার শিক্ষকদের  
    বর্তমান | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, হলদিয়া: স্কুলে আধুনিক পরিকাঠামো তৈরি করতে বেতনের টাকায় বিশেষ উন্নয়ন তহবিল গড়ছেন হলদিয়ার ঢেকুয়া বিবেকানন্দ অগ্রণী সঙ্ঘ হাইস্কুলের শিক্ষকরা। কুঁকড়াহাটি অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া এলাকার দুঃস্থ পড়ুয়াদের আরও বেশি স্কুলমুখী করতে শিক্ষকরা এই উদ্যোগ নিয়েছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি পড়ুয়াদের নিয়মিত কম্পিউটার শেখানো, স্মার্ট ক্লাসের মাধ্যমে পাঠদান, নাচ, গান, আবৃত্তির প্রশিক্ষণ, ক্রাফট, মডেল তৈরি সহ সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিতে পড়ুয়াদের জন্য তহবিল গড়েছেন তাঁরা। একাজে শিক্ষক, সম্পন্ন অভিভাবক ও স্কুলের প্রাক্তনীদের উৎসাহিত করছেন প্রধান শিক্ষক মনীন্দ্রনাথ গায়েন। শনিবার বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক সহ চারজন শিক্ষক-শিক্ষিকা স্কুলের উন্নয়ন তহবিলে দু’লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দান করেছেন। প্রধান শিক্ষক দান করেছেন দেড় লক্ষ টাকা। শিক্ষিকা পাপিয়া বেরা ৫০হাজার টাকা, খোকন দাস ১০হাজার টাকা, দেবিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৫হাজার টাকা দান করেছেন। এছাড়াও প্রাক্তন ছাত্র শিবনাথ দোলই, দীনেশ দাস ও কয়েকজন অভিভাবক ওই তহবিলে অর্থ সহায়তা করেছেন। 


    কুঁকড়াহাটির ঢেকুয়া বিবেকানন্দ অগ্রণী সঙ্ঘের উদ্যোগে ৫৫বছরের পুরনো ওই স্কুল গড়ে উঠেছে। ক্লাবের নামে প্রথমে তৈরি হয় জুনিয়র স্কুল। ৩০বছর পথচলার পর সেটি ২০০৫ সালে উত্তীর্ণ হয় হাইস্কুলে। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী অমিয় দোলই, ভবতারণ দোলই, নিশিকান্ত বেরা, সতীশচন্দ্র ভৌমিক সহ আরও অনেকের চেষ্টায় ১৯৬৯ সালে গড়ে ওঠে ঢেকুয়া বিবেকানন্দ অগ্রণী সঙ্ঘ হাইস্কুল। মাত্র ৫০-৬০জন পড়ুয়া নিয়ে কোনওরকমে চলছিল জুনিয়র স্কুল। স্থানীয়রা বলেন, ২০০৪সালের পর পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ওইসময় প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন মনীন্দ্রনাথবাবু। তিনি অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র ভর্তির আবেদন করেন অভিভাবকদের। এখন পড়ুয়ার সংখ্যা ৪৫০-র বেশি। অভিভাবকরা বলেন, গত ১০বছরে সাধারণ গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা দারুণ রেজাল্ট করে তাক লাগিয়েছে। 


    প্রধান শিক্ষক বলেন, পড়ুয়াদের প্রথম থেকে পড়াশোনার সঙ্গে সামাজিক কাজ, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় নিয়মিত। শিক্ষক বিদ্যুৎকুমার জানা, সুজাতা দাস, শিবশঙ্কর মাইতি, শিক্ষাকর্মী বরুণকুমার দোলাইয়ের মতো সকলেই পড়ুয়াদের জন্য পরিশ্রম করেন। তাদের জন্য শিক্ষকরাই গড়েছেন ১৩০০বইয়ের একটি লাইব্রেরি। শিক্ষকরা বলেন, স্কুল ও ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে ২০০৮ সালে প্রধান শিক্ষক তাঁর বাবা-মায়ের স্মৃতিতে একটি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট তৈরি করেন। ট্রাস্টের সহযোগিতায় প্রতিবছর শিক্ষামূলক ভ্রমণ, দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পুজোর সময় নতুন জামাকাপড়, প্রতিমাসে প্রতি ক্লাসে সৃজনশীলতা সম্মাননা, শিক্ষা সামগ্রী দান, জন্মদিন পালন, নারী দিবস ইত্যাদি বহু কর্মকাণ্ড পালিত হয়। রবিবার স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ট্রাস্টের সহায়তায় খেজুরিতে ভারতবর্ষের প্রথম পোস্ট অফিসে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ইতিহাস ভ্রমণ করানো হয়েছে।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)