নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: শনিবার প্রয়াত হয়েছেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক(জেলা পরিষদ) রানা বিশ্বাস(৪৭)। তাঁর প্রয়াণের দিনেই রীতিমতো জাঁকজমক করে অনুষ্ঠিত হল জেলা পরিষদ কাপের ফাইনাল ম্যাচ। যা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠতে শুরু করেছে সর্বত্র। এনিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে তৃণমূলেরই অন্দরেই। দলেরই একাংশ বলছেন, রানাবাবু তো জেলা পরিষদেরই দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ছিলেন। তিনি ছিলেন অভিভাবকের মতো। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফাইনাল ম্যাচ একদিন পিছিয়ে দিলে কি খুব ক্ষতি হতো? এনিয়ে প্রকাশ্যেই প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছেন দলের নেতারা।
গত ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে জেলা পরিষদ কাপ। জয়পুর গোবিন্দ মাহাত স্টেডিয়ামে ওই খেলার আয়োজন করেন জেলা পরিষদের সদস্য অর্জুন মাহাত। শনিবার ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলা। ওইদিন ভোরেই মৃত্যু হয় অতিরিক্ত জেলাশাসকের। অসুস্থ হয়ে গত ১০দিন ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা জেলায়। অনেকেই মনে করছিলেন, হয়তো জেলা পরিষদের কাপের ফাইনাল ম্যাচ পিছিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তা তো হলই না, বরং খেলা হল মহাসমারোহেই। পায়রা উড়িয়ে খেলার সূচনা থেকে শুরু করে ছৌ-নৃত্যের মধ্য দিয়ে খেলার সমাপ্তি অনুষ্ঠান- বাদ ছিল না কোনও কিছুতেই। শেষে কাপ হাতে পেয়ে বিজয়ী দলের জয়োল্লাসও ছিল চোখে পড়ার মতো। এসবের মধ্যে শোক কোথায়? সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় জেলা পরিষদের কোনও জনপ্রতিনিধি তাঁর শেষকৃত্যে হাজির পর্যন্ত হয়নি। শনিবারের খেলার অনুষ্ঠানে মঞ্চ আলো করে ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাত, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাত, বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ জয়মল ভট্টাচার্য, বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ থেকে শুরু করে আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি উজ্জ্বল কুমার, মাইনরিটি সেলের জেলা সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ। জেলার অনেকেরই ক্ষোভ, কেউ একবারের জন্যও প্রতিবাদটুকুও করলেন না। রানা বিশ্বাস তো জেলা পরিষদেই একজন অভিভাবক ছিলেন। অন্য কোনও ক্লাব, দল বা সংগঠন এই খেলার আয়োজন করলে না হয় আলাদা ব্যাপার। কিন্তু খেলার নাম যেখানে ‘জেলা পরিষদ কাপ’ বিতর্ক তো হবেই। এনিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলা পরিষদের মেন্টর তথা তৃণমূলের সহ সভাপতি জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, জেলা পরিষদের একজন শীর্ষ আধিকারিকের প্রয়াণের দিনে এই ধরনের অনুষ্ঠান! আয়োজকদের মানুষ্যত্ব বোধ আদৌ আছে? আমি এর তীব্র বিরোধিতা করছি। জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী সুমিতা সিং মল্লা বলেন, অনুষ্ঠানে আমারও আমন্ত্রণ ছিল। কিন্তু এডিএমের অকাল মৃত্যতে খেলার অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিত বলে মনে করিনি। খেলা অনেকবার হবে। মানুষটাকে তো ফিরে পাওয়া যাবে না।
জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, আমাদের আরও সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন ছিল। খেলাটা পিছিয়ে দিলেই ভালো করত। খেলার অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি বলেন, খেলা পূর্ব নির্ধারিত ছিল। বাইরের প্লেয়ার এসেছিল। তাই সময়সূচির পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। আমরা এডিমের প্রতি শোক জ্ঞাপন করে নীরবতা পালন করেছি।