সংবাদদাতা, রামপুরহাট: মাস খানেক আগে ১২ ফেব্রুয়ারির পর যে কোনওদিন ফের রেল অবরোধ করে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেল কর্তাদের চিঠি দিয়েছিল নলহাটি নাগরিক মঞ্চ। তার আগে তাঁদের দাবি দাওয়া নিয়ে বৈঠকের জন্য মঞ্চকে চিঠি দিল রেল। আগামী মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটেয় হাওড়া ডিআরএম অফিসের কনফারেন্স হলে আয়োজিত বৈঠকে মঞ্চের কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে। এদিকে অধিকাংশ এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ না থাকলেও যাত্রী সুবিধার্থে নলহাটি জংশনে সিআইবি (কোচ পজিশন বোর্ড)ও টিআইবি (ট্রেনের নাম, নম্বর ও ছেড়ে যাওয়ার সময়সূচি সহ বোর্ড) ব্যবস্থা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে রেল।
তাদের দাবি, আপ ও ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা, কুলিক ও ডাউন উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের স্টপেজ দিতে হবে। এছাড়া যাত্রী সুবিধার্থে স্টেশনের উন্নয়ন ও করোনা কালে বন্ধ থাকা বারাণসী এক্সপ্রেস, বর্ধমান মালদা লোকাল, দানাপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জার, বারহাড়োয়া শিয়ালদহ বামদেব প্যাসেঞ্জার ও রামপুরহাট সাহেবগঞ্জ লোকাল চালুর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে নলহাটি নাগরিক মঞ্চ। গত দু’বছরে বেশ কয়েকবার অবরোধের ডাক দিয়ে রেল কর্তাদের আশ্বাসে সরে আসতে হয়েছে তাঁদের। রেলকে তাঁদের দেওয়া কথা স্মরণ করাতে বারবার চিঠি দেয় মঞ্চ। কিন্তু উত্তর না পেয়ে আগাম জানিয়ে গত ১ ডিসেম্বর বড়সড় রেল অবরোধ করেন তাঁরা। কয়েকশো মানুষ শামিল হন। অবরোধের জেরে বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে হাওড়া নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত, সাহেবগঞ্জ হাওড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ছাড়াও নানা দূরপাল্লার ও লোকাল ট্রেন। ওইদিন দুপুর নাগাদ এডিআরএম এবং সিনিয়র ডিসিএম মঞ্চের সদস্যদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ধরে আলোচনা চললেও ‘নিট ফল জিরো’। শুধুমাত্র ডাউন উত্তরবঙ্গের স্টপেজের মৌখিক আশ্বাস ছাড়া কোনও দাবি মানতে চাননি তাঁরা। ক্ষুব্ধ মঞ্চের সদস্যরা বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। যদিও সেই আন্দোলনে পরে এক মাস পেরিয়ে গেলেও ডাউন উত্তরবঙ্গের স্টপেজ দেওয়া হয়নি। উল্টে রেল অবরোধ করায় মঞ্চের পদাধিকারীদের কেস দিয়েছে রেল। শনিবার সেই মামলায় রামপুরহাট আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন তাঁরা।
এরই মধ্যে তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে বৈঠকে বসতে চেয়ে মঞ্চকে চিঠি দিল রেল। মঞ্চের সহ সম্পাদক রাজেন্দ্র মিশ্র বলেন, ওইদিন নাগরিক মঞ্চ, ব্যবসায়ী সমিতি মিলিয়ে ১০-১২ জনের একটি দল হাওড়া ডিআরএম অফিসে বৈঠকে যোগ দিতে যাব। আমাদের দাবিগুলি পূরণের লিখিত আশ্বাস না মিললে পূর্ব নির্ধারিত ১২ ফেব্রুয়ারির পর যেকোনও দিন রেল অবরোধ আন্দোলনে নামব। রেল যত পারে আমাদের কেস দিক। কিন্তু বঞ্চনার প্রতিবাদ থেকে নলহাটিবাসী সরে আসবে না।
উল্লেখ্য, গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন নলহাটি জংশন। রয়েছে ৫১ পীঠের অন্যতম নলাটেশ্বরী মন্দির ও বৃহৎ পাথর শিল্পাঞ্চল। দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রেল যোগাযোগের অন্যতম এই জংশন দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। এছাড়া এই জংশন থেকে আজিমগঞ্জ, কাটোয়া যাওয়া যায়। উত্তরবঙ্গ ও কলকাতা যাওয়ার অধিকাংশ এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ নেই এখানে। বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে নির্ভর করতে হয় ১৫ কিমি দূরের রামপুরহাট জংশনের উপরে। এদিকে অধিকাংশ ট্রেনের স্টপেজ না থাকলেও এই স্টেশনে সিআইবি ও টিআইবি বোর্ড বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে রেল। গত বৃহস্পতিবার রেলের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এব্যাপারে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। -নিজস্ব চিত্র