• রোগমুক্তির আশ্বাসে মঙ্গলঘট স্থাপন, সোনা-রুপো নিয়ে উধাও বাবাজি
    বর্তমান | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কালনা: রোগ মুক্তির নামে মঙ্গলঘট স্থাপন। এমন অভিনব কৌশলে তিন গৃহবধূর কাছ থেকে সোনা, রুপোর গয়না সহ নগদ প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক মাতাজিকে গ্রেপ্তার করেছে কালনা থানার পুলিস। ধৃত মাতাজির নাম শিখারানি দাস। বাড়ি পূর্বস্থলী থানার পারুলিয়ায়। যদিও পুলিস নাম ও ঠিকানা নিয়ে সংশয়ে। ধৃতকে রবিবার কালনা মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচ দিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেন। এই ঘটনায় এক বাবাজিকেও খুঁজছে পুলিস।


    স্থানীয় ও পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা থানার শ্রীরামপুর আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা পুতুল রায়ের পরিবারে অসুখ-বিসুখ লেগেই রয়েছে। মাস খানেক আগে ঠাকুরের সেবার জন্য মাগন তুলতে আসা এক মাতাজির সঙ্গে পুতুলের পরিচয় হয়। তাকে বাড়ির সমস্যার কথা জানান। মাতাজি বলেন, তার পরিচিত এক বাবাজি রয়েছেন। তিনি মন্ত্রতন্ত্রে নানা রোগ সারান। বড় বড় রোগ সেরে গিয়েছে। পুতুল তার কথায় বিশ্বাস করেন। মাতাজি ও বাবাজিকে আসতে বলেন। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি মাতাজি এক বাবাজিকে সঙ্গে নিয়ে পুতুলের বাড়িতে আসেন। এদিকে, পুতুলের দুই প্রতিবেশীও একই সমস্যা থাকায় তাঁরাও রোগমুক্তির জন্য আগ্রহ দেখান। ওই বাবাজি জানান একজনের জন্য নগদ ১৫ হাজার টাকা করে লাগবে। সেই সঙ্গে বাড়িতে মঙ্গলঘট বসাতে হবে। সেই মতো পুতুলের বাড়ি সহ আরও দু’জনের বাড়িতে মঙ্গলঘট স্থাপনের উদ্যোগ শুরু হয়। পুতুলের বাড়িতে দু’টি ঘট স্থাপন হয়। চলে অনুষ্ঠানও। ঠাকুর ঘরে মাতাজি ও বাবাজি দু’জন একটি  ঘটে গৃহস্থকে সোনা, রুপোর গয়না ও তামা রাখতে বলেন। সেই মতো পুতুল দুটি ঘটে সোনা, রুপোর গয়না ও তামা রাখেন। বাবাজি পুতুলকে ঘরের দাওয়ায় বসতে বলে নিজে সোনা, রুপোর গয়না ও তামা মঙ্গলঘটে রেখে একটি লাল কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে স্থাপন করেন। একই রকম ভাবে প্রতিবেশী আরও দু’জনের বাড়িতেও সোনা, রুপো গয়না ও তামা রেখে মঙ্গলঘট স্থাপন করে। বাবাজি জানান, ঘটটি ১৫দিনের মধ্যে খোলা যাবে না। তার মধ্যেই ঘটটি ফেটে যাবে। তার পর থেকে পরিবারে সমস্ত রোগ মুক্তি ঘটবে। সুখ-শান্তি ফিরবে। এরপর বাবাজি তিন পরিবার থেকে পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয়। এদিকে, দু’দিন বাদেই পুতুলের বাড়ির দু’টি ঘটের মধ্যে একটি ঘট ইঁদুরে মাটিতে ফেলে দেয়। তিনি ফোনে বাবাজিকে জানালে বাবাজি আর আসে না। এরপর ঘট খুলে দেখেন তাতে একটি জবা ফুল ও হরতকি, সুপুরি ছাড়া কিছুই নেই। ঘটে দেওয়া সোনা, রুপোর গয়না উধাও। প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানালে তাঁরাও ঘটের লাল কাপড় খুলে দেখেন, সোনা, রুপোর গয়না নেই। বুঝতে পারেন, তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। কালনা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। রবিবার সকালে কালনা শ্বাসপুর এলাকা থেকে ওই মহিলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। পুতুল এদিন বলছিলেন, বাড়িতে অসুখ-বিসুখ লেগেই রয়েছে। স্থানীয় ও ভিনরাজ্যে ডাক্তারের কাছে গিয়েও রোগ সারছে না। ওর কথায় বিশ্বাস জন্মেছিল। আমার সামনেই ঘটে সোনা, রুপোর গয়না রেখে ছিল। কখন হাত সাফাই করেছে বুঝতে পারিনি। আধ ভরি ওজনের দু’টি সোনার আংটি ও বেশ কিছু রুপোর গয়না, ১৫ হাজার টাকা আমাদের খোওয়া গিয়েছে। আমার মতো দুই প্রতিবেশীদেরও সোনার কানের দুল, আংটি সহ রুপোর গয়না ৩০ হাজার টাকা খোওয়া গেছে।  কালনা থানার এক পুলিস অফিসার বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে এক মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। মহিলার নাম, ঠিকানা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তদন্ত চলছে।          
  • Link to this news (বর্তমান)