এই সময়: প্রশ্নের সঙ্গে মিশে আছে হাহাকার। ‘এখন কী হবে আমার? কী ভাবে পরীক্ষায় বসব? সব তো পুড়ে ছাই হয়ে গেল। তা হলে?’
রবিবার সকাল থেকে এই কথাগুলো বার বার আউড়ে চলেছে চাঁদনি খাতুন। সামনেই তার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষার প্রস্তুতিও চলছিল ভালোই। তবে সব শেষ করে দিল শনিবার রাতের আগুন। আগুনে নারকেলডাঙা বস্তির যে ৫০টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে চাঁদনিদের ঘরও।
আগুন গিলে নিয়েছে চাঁদনির অ্যাডমিট কার্ড থেকে বই–খাতা সবই। প্রশাসনের তরফে অবশ্য আশ্বাস মিলেছে, পরীক্ষায় বসতে চাঁদনির কোনও সমস্যা হবে না, ব্যবস্থা হবে তার বই–খাতারও। শনিবারের আগুনে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাওয়া, ৫৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করা চাঁদনির অবশ্য তাতেও দুশ্চিন্তা কাটছে না। যাঁকে সে সামনে পাচ্ছে, তাঁকেই চাঁদনির প্রশ্ন, ‘আমি পরীক্ষায় বসতে পারব তো?’
নারকেলডাঙা বস্তিতে দিদি সালমার সঙ্গে থাকে চাঁদনির। ভুল হলো। থাকত। কারণ, তাদের ঘর তো পুড়ে খাক। শনিবার রাত তখন পৌনে ১১টা। রাতের খাওয়া শেষ করে সালমা ঘরের বাইরে বেরোতেই চমকে যান। আশপাশের ঘরগুলো দাউ দাউ করে জ্বলছে। কয়েক মুহূর্ত সালমা দাঁড়িয়ে থাকেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায়। ঘরের ভিতর তখন পড়ছে সালমার বোন, মোমিন হাইস্কুলের ছাত্রী চাঁদনি। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে সালমা ঘরে ঢুকে এক ঝটকায় বোন চাঁদনির হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। এবং তার পরেই আগুন এসে পৌঁছয় তাঁদের ঘরে।
রবিবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ভস্মীভূত জিনিসের মধ্যে তার বই, অ্যাডমিট কার্ড, খাতা তন্ন তন্ন করেও খুঁজেও কিছুই পায়নি চাঁদনি। সে বলছে, ‘আগুনে আমার সব শেষ হয়ে গেল।’
নারকেলডাঙা বস্তির আগুন গিলে খেয়েছে নুরজাহান বিবির ১৫ বছরের সঞ্চয়। পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি বলছিলেন, ‘বিড়ি বেঁধে প্রায় ২৫ হাজার টাকা জমিয়েছিলাম ১৫ বছর ধরে। কয়েক ঘণ্টার আগুনে সব শেষ।’ সালিমা খাতুনের কথায়, ‘মেয়ের বিয়ের জন্য পাঁচ বছর ধরে তিল তিল করে টাকা জমিয়ে সোনার দুল, হার কিনে রেখেছিলাম। সব পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। মেয়েকে আর সোনার গয়না দিতে পারব বলে মনে হয় না।’
ইমতিয়াজ খানের আক্ষেপ, ‘বছর দশেক আগে দাদু মারা গিয়েছেন। দাদুর একটাই ছবি বাড়িতে ছিল। সেটাও পুড়ে ছাই। দাদুর আর কোনও স্মৃতি রইল না।’
এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম আশ্বাস দিয়েছেন নারকেলডাঙা বস্তির সব হারানো ওই মানুষদের পাশে থাকার। কিন্তু এখন কোথায় থাকবেন? মাথার উপর ছাদ ফের হবে তো? এই সব প্রশ্নই তাড়া করে বেড়াচ্ছে সালিমা, নুরজাহানদের।