• জলাশয় বুজিয়ে বিল্ডিং হলেই ব্যবস্থা পুরসভার, হেলে পড়া বাড়ি রুখতে কড়া নির্দেশ
    এই সময় | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • কলকাতা ও শহরতলিতে পর পর কয়েকটি বহুতলের হেলে পড়ার ঘটনা সামনে আসার পর কড়া পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার। পুকুর বুজিয়ে রাজ্যের কোথাও বেআইনি ভাবে বাড়ি তৈরি হচ্ছে কি না, তার উপর নজরদারি বাড়াতে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর নতুন একটি নির্দেশিকা জারি করেছে।

    তাতে বলা হয়েছে, পুকুর কিংবা জলাশয় বুজিয়ে কোথাও বাড়ি তৈরি হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে স্থানীয় পুরসভাকে। ওই নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, কোনও পুরসভা এখন আর জলাশয় বোজানোর অনুমতি দিতে পারবে না।

    রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সম্প্রতি যে ক’টি বহুতলের হেলে পড়ার ঘটনা সামনে এসেছে, সেগুলোর প্রায় সব ক’টাই তৈরি হয়েছে পুকুর বুজিয়ে। সরকারি ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকেরই ব্যাখ্যা, পুকুর ভরাট করার পরেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত সেখানকার মাটি নরম থাকে।

    ফলে, ঠিক মতো পাইলিংয়ে ভিত পোক্ত না–হলে মাটি বসে গোটা বাড়িটাই নেমে যেতে পারে এবং সম্ভবত সে জন্যই বাড়িগুলো হেলে পড়ছে। স্বভাবতই সমস্যায় পড়েছেন ওই সব বাড়ির বাসিন্দারা। এই সমস্যার কথা মাথায় রেখেই পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে আরও কঠোর মনোভাব দেখাতে পুরসভাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে পুর দপ্তর।

    পুকুর কিংবা জলাশয় ভরাট করার পর অনেকে সেটির কনভারশন করিয়ে নেন। খাতায়–কলমে সেই জমির চরিত্র পাল্টে যায়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, জমি তিন কাঠার কম হলে বিএলআরও (ব্লক ল্যান্ড অ্যান্ড ল্যান্ড রিফর্মস অফিস) থেকে কনভারশন হয়। তার চেয়ে বড় জমি হলে কনভারশন করাতে হয় ডিএলআরও (ডিস্ট্রিক্ট ল্যান্ড অ্যান্ড ল্যান্ড রিফর্মস অফিস) থেকে।

    সে ক্ষেত্রে ফিশারিজ় অ্যাক্ট মেনে এডিএম–এলআর (ফিশারিজ়)–এর কাছ থেকে শংসাপত্র নিতে হয়। অভিযোগ, এক শ্রেণির অসাধু প্রোমোটার ওই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পুকুর বুজিয়ে সেগুলোকে ডাঙা জমি হিসেবে কনভারশন করিয়ে নিচ্ছেন। এ বার এ ক্ষেত্রেই বাড়তি সতর্কতা নিতে বলা হয়েছে পুরসভাগুলোকে।

    পুর দপ্তর জানিয়েছে, জমির কাগজপত্র ভালো ভাবে খতিয়ে দেখার পর তবেই সেখানে বাড়ি নির্মাণের ছাড়পত্র দেবে পুরসভা। ভিত তৈরির সময় থেকেই নজরদারি চালাবেন পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা। বাড়ি তৈরি হওয়ার পর পুরসভা প্রথমে ইঞ্জিনিয়ারদের দেওয়া স্ট্রাকচারাল স্টেবিলিটি সার্টিফিকেট ভালো ভাবে খতিয়ে দেখবে। সেটা ঠিকঠাক থাকলে তবেই ‘অকুপ্যান্সি সার্টিফিকেট’ (আংশিক অথবা পুরোটা) দেবে পুরসভা। অকুপ্যান্সি সার্টিফিকেট না–থাকলে ওই বাড়ির পানীয় জল ও নিকাশির সংযোগ মিলবে না।

    পুর দপ্তরের নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, বাড়ির উচ্চতা ১০ মিটারের (পাহাড়ি এলাকার ক্ষেত্রে ৬.৫ মিটার) বেশি হলেই সয়েল টেস্ট করা আবশ্যক। আবার, বাড়িতে আন্ডারগ্রাউন্ড স্ট্রাকচার থাকলে সেই বাড়ির অবস্থান যদি কোনও জলাশয়ের ১৫ মিটারের মধ্যে হয়, সে ক্ষেত্রেও ভিত তৈরির আগেই মাটি পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।

  • Link to this news (এই সময়)