• পদ্মবনে কাঁটাই বেশি, মরচে পড়েছে কাস্তেয়
    এই সময় | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • দিব্যেন্দু সরকার, আরামবাগ

    নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর পরীক্ষা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। কিন্তু আদৌ কি তা সম্ভব? রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি এবং অস্তমিত সিপিএমের সাংগঠনিক ছবিটা মোটেও সুখকর নয় আরামবাগে।

    জেলা সাংগঠনিক স্তরে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। ঘটা করে পদ্মশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রতি জেলায় সদস্য সংগ্রহের ঢাক বাজিয়ে দিলেও বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলন নেই। লোক দেখাতে জোর করে কিছু লোককে ধরে এনে সদস্য করা হলেও কর্মসূচি আখেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে।

    কিছু দিন আগে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী এসেছিলেন আরামবাগে। কিন্তু নামমাত্র একটি–দু’টি দোকানে গিয়ে নমো নমো করে কাজ সেরেই ফিরে গিয়েছেন। নিচু স্তরের কর্মীরা তাতে ক্ষুব্ধ। আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষের অবশ্য দাবি, এই মহকুমায় সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লক্ষ। তা ছোঁয়া গিয়েছে!

    যদিও জেলা সভাপতির এমন দাবির সঙ্গে সহমত নন আরামবাগ মহকুমার অন্য তিন বিজেপি বিধায়ক। বরং বিমান ঘোষের ডাকা কোনও কর্মসূচিতে দেখা যায় না খানাকুল, গোঘাট ও আরামবাগের বিধায়ককে। এতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে। একমাত্র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বা রাজ্যস্তরের নেতা এলে সকলকে এক মঞ্চে দেখা যায়।

    একই অবস্থা সিপিএমের। একটা সময় আরামবাগে দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতাদের হুঙ্কার ছিল নিত্যদিনের পরিচিত ছবি। সেই সিপিএমের এরিয়া কমিটির অফিসে আজ কোনও লোক নেই। ধুঁকছে এক সময়ের জ়োনাল অফিস, যা এখন এরিয়া কমিটি অফিসে পরিণত। সভা–সমিতিতেও কর্মী–সমর্থকদের ভাটা। ২০১১ সালে পালাবদলের পরে সিপিএমের অভিযোগ ছিল, তাদের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের অফিসগুলি তৃণমূল দখল করে নিয়েছে। পরে তৃণমূল বেশ কিছু শাখা সংগঠনের অফিস ফিরিয়ে দিলেও তালা খোলার লোক নেই। আরামবাগ মহকুমা জুড়ে পার্টি নতুন কোনও সদস্য তৈরি করতে পারেনি। কিছু পুরনো সদস্য মেম্বারশিপ পুনর্নবীকরণও করেননি।

    ২২–২৫ ফেব্রুয়ারি সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন ডানকুনিতে। কিন্তু আরামবাগ এলাকা থেকে কত জন থাকবেন সেখানে, তা নিয়ে প্রবল ধোঁয়াশা রয়েছে। সিপিএমের জেলা নেতা পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘আরামবাগের মধ্যে দু’টি এরিয়া কমিটি আছে। সবমিলিয়ে ১৫০০ জন যাবেন। কেউ বাসে বা ছোট গাড়িতে যাবেন। আবার ট্রেনেও কিছু কর্মী যেতে পারেন।’

    গোঘাটের বিজেপি বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক–কে এক বছরেরও বেশি সময় এলাকায় দেখতে পাননি কর্মীরা। সদস্য সংগ্রহ অভিযানে ছিলেন না তিনি ও আরামবাগের বিধায়ক। এমনকী, আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার কার্যালয় ভবনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এলেও ছিলেন না খানাকুল, আরামবাগ ও গোঘাটের বিধায়ক। ২০২১ সালে আরামবাগ মহকুমায় চারটি বিধানসভার আসন দখল করেছিল বিজেপি। তার পরে ধীরে ধীরে তৃণমূল যে ভাবে রাজ্য সরকারের যাবতীয় প্রকল্প এবং বিশেষ করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে হাতিয়ার করে সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছেছে, তাতে বিপর্যয়ের অশনি সঙ্কেত দেখছে পদ্ম–শিবির।

    সিপিএমের গোঘাট, খানাকুল ও পুরশুড়ার এরিয়া কমিটির অফিস পতাকা উড়লেও গেটের তালা খোলা যায়নি। জেলা স্তরের কোনও নেতা এলে কে তালা খুলবেন, তা নিয়ে ফোনাফোনি শুরু হয় নেতৃত্বের। বিভিন্ন কলেজে ছাত্র সংগঠনের ছবিও বিবর্ণ। এই মুহূর্তে কোনও কলেজে একজনও বাম ছাত্রনেতা নেই। অণুবীক্ষণে হাতে গোনা যে নিচুতলার কর্মীদের খোঁজ মিলেছে, তাঁরা নেতৃত্বের উদাসনীতায় খাপ্পা। পরিস্থিতি এমনই, সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা পর্যন্ত কর্মীদের সামনে আসতে চান না হেনস্থার ভয়ে।

    দুই বিরোধী রাজনৈতিক দলের এমন দশা দেখে হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্নার সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘পরের বিধানসভা নির্বাচনে লুপ্তই হয়ে যাবে এই দু’টি দল।’

  • Link to this news (এই সময়)