এই সময়, কলকাতা ও সোদপুর: আরজি করের নির্যাতিতার মরণোত্তর প্রথম জন্মদিন পালন করল নাগরিক সমাজ। ওই তরুণী চিকিৎসক বেঁচে থাকলে রবিবার ৩২ বছরে পা দিতেন তিনি। সেই দিনটিকে স্মরণ করে তাই এ দিন একজোট হয়ে পথে নামলেন আন্দোলনকারীরা।
তাতে সামিল হয় চিকিৎসকদের বেশ কয়েকটি সংগঠনের পাশাপাশি নানা গণ–সংগঠন। বিভিন্ন জেলাতেও নানা ভাবে নির্যাতিতার জন্মদিন পালনের পাশাপাশি ‘বিচারহীন ৬ মাস’ও পালন করেন তাঁরা। বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেন রাজনৈতিক নেতারাও। সোদপুরে নিহত তরুণী চিকিৎসকের বাড়ির অদূরে জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের তরফে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবির আয়োজিত হয়। বিতরণ করা হয় গাছের চারা।
মাঝে সময়ের ব্যবধান ৬ মাসের। গত বছর ৯ অগস্ট ভোররাতে আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় তাঁদের একমাত্র মেয়ের ধর্ষণ–খুনের ঘটনার স্মৃতি এখনও দগদগে মা–বাবার মনে। রবিবার ছিল আরও একটি ৯ তারিখ। ৯ ফেব্রুয়ারি। হিসেবমতো মেয়ের ৩২–তম জন্মদিন। তবে এই জন্মদিনে আর প্রতীক্ষা নয়, চোখের জলে মেয়ের মৃত্যুর বিচার চেয়ে রাস্তায় নামলেন বাবা–মা। বিচার না–পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে স্পষ্ট করে দেন তাঁরা।
রবিবার মেয়ের জন্মদিনে বাড়ির ছাদে কমলা রঙের বুগেনভেলিয়া ফুলের গাছ লাগাতে ভোলেননি তাঁরা। চোখের জল মুছে মা বলেন, ‘গাছ মেয়ের খুব প্রিয় ছিল। বিশেষ করে, ফুলের গাছ। ছাদ জুড়ে নানা রঙের বুগেনভেলিয়া ফুল ও অন্যান্য ফুলের গাছ লাগিয়েছিল। শুধু কমলা রঙের বুগেনভেলিয়া ছিল না। সেই রঙের ফুলের গাছ কিনে এনে আজ (রবিবার) বাড়ির ছাদে ওই গাছ লাগিয়েছি।’
এ দিন সকালে পানিহাটি নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সোদপুরের বাড়ির সামনে থেকে কাচকল মোড় পর্যন্ত মৌন মিছিল হয়। বাড়ির সামনে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন বাবা–মা। পরে মহেন্দ্রনগর ও পার্থপুর অঞ্চলে দু’টি অভয়া ক্লিনিকেও তাঁরা যান।
জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, দু’টি ক্লিনিক মিলিয়ে এ দিন প্রায় ৩৫০ জনকে পরিষেবা দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রত্যেকের হাতে একটি করে গাছের চারা তুলে দেওয়া হয়। নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘আমরা গাছ লাগানোর আবেদন জানিয়েছিলাম। সাড়া দিয়েছেন মেয়ের সহকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেই। লড়াই থেকে আমরা পিছু হটছি না।’ বিকেলে অভয়া মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত কলেজ স্কোয়্যার থেকে আরজি কর পর্যন্ত হওয়া মিছিলে যোগ দেন তাঁরা।
এ দিন জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের আহ্বানে আরজি কর কলেজ চত্বরেই ‘অঙ্গীকার মহাসমাবেশ’ আয়োজিত হয়। চিকিৎসক সংগঠন সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম ও মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার এবং নার্সদের সংগঠন নার্সেস ইউনিট–সহ শতাধিক সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা তাতে যোগ দেন।
জন্মদিন পালন করা হয় রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি–র তরফ থেকেও। মৃতার বাড়িতে গিয়ে তাঁর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ও মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নির্যাতিতার জন্মদিন উপলক্ষে এ দিন প্রয়াগরাজে সপরিবার পুণ্যস্নানের পর তাঁর স্মৃতিতর্পণ করেন বিজেপি–র রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার।