• পড়ুয়াদের মানুষ করার স্বপ্ন দেখেন অবসরও অক্লান্ত স্বপ্না
    এই সময় | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • কৌশিক দে, মালদা

    সকাল দশটা বাজতেই চলে আসেন স্কুলে। মাঝে টিফিনের সময়ে একটু অবসর। তারপর ফের শুরু হয় বিজ্ঞানের ক্লাস। বিকেল চারটে পর্যন্ত ক্লাস নেন। বছর দশেক আগে মালদার ইংরেজবাজার থানার কমলাবাড়ি সরকারি হাইস্কুল থেকে অবসর নিলেও সত্তর বছরের স্বপ্না ঘোষরায় দাসের এই রুটিনে কোনও বদল হয়নি।

    অবসরের আগে যে ভাবে সময় মেনে স্কুলে যেতেন, এখনও একেবারে তাই। এ জন্য অবশ্য কোনও পারিশ্রমিকও নেন না তিনি। স্কুলই যেন তাঁর কাছে সংসার। পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলাটাই তাঁর স্বপ্ন।

    ছাত্রছাত্রীদের উপরে অবসরপ্রাপ্ত দিদিমণির ভালোবাসার কোনও তুলনা হয় না, জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মতিউর রহমানের কথায়, ‘স্বপ্না দিদিমণি ভালো মনের মানুষ। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরেও স্কুল আসা বন্ধ করেননি। আগেও যে ভাবে আসতেন, একই নিয়মে এখনও নিয়মিত স্কুলে আসেন। ক্লাস নেন। আমরা ওঁর জন্য গর্বিত। এই কাজের জন্য তাঁকে পুরস্কৃত করেছে জেলার একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।’

    ইংরেজবাজার পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর সরকারি কলোনির বাসিন্দা স্বপ্না। ২৬ বছর কমলাবাড়ি হাইস্কুলে শিক্ষকতার পরে তিনি অবসর নেন ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। তাঁর আসল বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটে। বিয়ের পরে কর্মসূত্রে মালদার স্থায়ী বাসিন্দা। স্বামী পীযূষ দাস বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। তিনিও অবসর নিয়েছেন।

    শহরের বাড়ি থেকে যদুপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কমলাবাড়ি হাইস্কুলের দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। অটো বা টোটো ধরে কাঁটায় কাঁটায় দশটায় স্কুলে পৌঁছে যান পড়ুয়াদের প্রিয় ‘স্বপ্না দিদিমণি’। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের অঙ্ক, ভৌত বিজ্ঞান ক্লাস নেন তিনি। স্বপ্নার কথায়, ‘আমি অবসর নিলেও আসলে অবসর নিইনি। অবসরের পরের দিন থেকেই নিয়মিত ক্লাসে নিই।’

    কেন এত পরিশ্রম করেন?

    স্বপ্না বলেন, ‘যদি ভালো করে শিক্ষা না–দিতে পারি, তা হলে ওদের ভবিষ্যৎ গড়ব কী করে। শুধু বিজ্ঞানের বিষয় পড়ানো নয়, সামাজিক গঠনমূলক কাজের ক্ষেত্রেও ছাত্রছাত্রীরা কী ভাবে মন দেবে, ওদের সঙ্গে মতামত আদান–প্রদান করি।’ তাঁর সংযোজন, ‘আসলে এতগুলো বছর তো ওই স্কুলে কাটিয়েছি। ছেলেমেয়েদের জন্য মনটা কেমন করে। তাই আজও নিয়ম করে স্কুলে যাই। যতদিন বাঁচব এ ভাবেই আমি স্কুলে আসব। ছেলেমেয়েদের পড়াব।’

    সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী শামিমা খাতুনের কথায়, ‘স্বপ্না দিদিমনি না–এলে আমাদেরও ভালো লাগে না। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তাও দেন তিনি।’ আর এক ঝুমা মণ্ডল বলে, ‘দিদিমণি আমাদের নিজের সন্তানের মতো দেখেন। তাই আমরা তাঁর ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার কথা ভাবতেই পারি না।’

  • Link to this news (এই সময়)