এই সময়, বারাসত: বাংলায় বামেরা ক্ষমতায় নেই এক যুগেরও বেশি। তবুও উত্তর ২৪ পরগনায় সিপিএমের গোষ্ঠীকোন্দল সংস্কৃতিতে বদল আসেনি এতটুকু। জেলার নতুন সম্পাদক কে হবেন, তা ঠিক করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে। অন্যান্য জেলায় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনই পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠন করে ফেলতে পারলেও উত্তর ২৪ পরগনায় সম্মেলনের শেষ দিন পর্যন্ত চলল দড়ি টানাটানি।
তা–ও রবিবার রাত ন’টা পর্যন্ত নতুন সম্পাদক কে হবেন, তা ঠিক করতে পারল না সিপিএম। দলের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, ‘সেই সুভাষ চক্রবর্তীর আমলে উত্তর ২৪ পরগনার জেলায় যে গোষ্ঠীকোন্দল চলত, এখনও সেই প্রবণতা অব্যাহত। জেলা সিপিএমে অনেকে এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, পার্টি এখন রাজ্যে আর ক্ষমতায় নেই।’
বারাসত রবীন্দ্র ভবনে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনেই সম্পাদক বদল নিয়ে সরব হয়েছিলেন অধিকাংশ প্রতিনিধি। মৃণাল চক্রবর্তীকে সম্পাদক না–করার পক্ষেই মত দিয়েছিলেন তাঁরা। বিগত জেলা সম্পাদক হিসেবে মৃণাল চক্রবর্তীর ভূমিকা নিয়েও কার্যত তুলোধোনা করেন প্রতিনিধিরা। অধিকাংশ প্রতিনিধির বিরোধিতা সম্মেলন কক্ষে হাজির থেকেই শুনতে হয়েছে তাঁকে। প্রাক্তন জেলা সম্পাদক গৌতম দেব এসেও প্রতিনিধিদের এই বেলাগাম সুর আটকাতে পারেননি। নতুন সম্পাদক কে হবেন, তা নিয়ে শনিবার আলাদা ভাবে বিগত জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা বৈঠকও করেছিলেন। মধ্যরাত পর্যন্ত সেই বৈঠক চলে। কিন্তু তাতেও কোনও রফাসূত্র বের হয়নি।
রবিবার শেষ দিনেও সম্পাদক–ইস্যুতে ফের সুর চড়িয়েছেন প্রতিনিধিরা। সূত্রের খবর, প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েও মৃণাল চক্রবর্তী জেলা সম্পাদক পদ ছাড়তে নারাজ। রবিবার বিকেলেই বিগত জেলা কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে একদফা বৈঠক করেন। কিন্তু তাতেও নতুন সম্পাদক কে হবেন, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে পারেনি সিপিএম। \
এ দিকে, সম্মেলনের শেষ দিনে উপস্থিত মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, শ্রীদীপ ভট্টাচার্যর মতো রাজ্য নেতারা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটিকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, নতুন সম্পাদক কে হবেন, নিয়ে কিছুতেই ভোটাভুটি করা যাবে না। জেলা কমিটিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ঐক্যের ভিত্তিতে।
বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সিপিএম যখন নিজেদের তৃণমূল অথবা বিজেপির থেকে অনেক বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের প্রজেক্ট করার চেষ্টা করছে, তখন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্মেলনকে ঘিরে তাদের গোষ্ঠীকোন্দল বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেবে বলে মনে করছেন বামপন্থীদের একাংশ।