চারপাশে প্রবল আওয়াজ, হইহট্টগোল। মোবাইল ফোনের ও পারে বাড়ির যিনি আছেন, তিনি যাতে শুনতে পান, সে জন্য যতটা সম্ভব গলা তুলে প্রিয়ম বসু বললেন, ‘আজ বইমেলার শেষ দিন, ফিরতে কিন্তু দেরি হবে।’ প্রিয়ম এসেছেন ব্যান্ডেল থেকে। তাঁকে ফিরতে হবে ট্রেনে। হাওড়া থেকে ট্রেনে যাঁরা বাড়ি ফেরেন, তাঁরা বিলক্ষণ জানেন যে, ট্রেন ছাড়া এবং গন্তব্যে পৌঁছানো— কোনওটাই সময় মেনে হয় না। তার উপর রবিবার— ছুটির দিন। তবে বইমেলার শেষ দিনে যাঁরা আসেন, সাধারণত তাঁরা তো আর তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার কথা ভেবে আসেন না।
অন্য দিনগুলো বইমেলা খোলা থাকে রাত ৮টা পর্যন্ত। শেষ দিনটায় এক ঘণ্টা বেশি। নিছক বাড়ি ফেরার কারণে বোনাস ওই এক ঘণ্টা ফেলে আসা যায় না মেলার মাঠে।
কস্ট অ্যাকাউন্ট্যান্সির পড়ুয়া, ভূতের গল্পের ভক্ত, অশোকনগরের মফিজুল মণ্ডল রবিবার নিয়ে দ্বিতীয় দিন এলেন ৪৮তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায়। তিনি বলছেন, ‘বইমেলার শেষ দিনের সব চেয়ে বড় আকর্ষণ হলো, অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট। সেই লোভটা ছাড়তে পারি না।’ বইমেলা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বের একটি আবাসন থেকে এসেছিলেন একঝাঁক তরুণ–তরুণী। তাঁরা বলছিলেন, ‘এ ক’দিন বইমেলা ছিল আমাদের মিটিং প্লেস, আড্ডার জায়গা। এই আড্ডার জায়গা ফেরত পেতে অপেক্ষা করতে হবে আবার একটা বছর। এটা ভেবেই খারাপ লাগছে।’
কেমন হলো বইমেলা? বুক সেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ডের তরফে সবাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় ও সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে বলছেন, ‘বাংলায় এত বড় মেলা কি আর কোথাও হয়? উপলক্ষ বই হলেও বিষয়টা কি শুধু বইয়েই আটকে থাকে?’ গিল্ড জানাচ্ছে, এ বার বইমেলার ১২ দিনে (উদ্বোধনের দিন বাদ দিয়ে) মোট ২৭ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছে, বই বিক্রি হয়েছে ২৫ কোটি টাকার। গত বছর ২৩ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল, ভিড় হয়েছিল ২৭ লক্ষ মানুষেরই। ‘গত বছরের মতো এ বারের বইমেলা ১৪ দিন নয়, ছিল ১২ দিনের। ১৪ দিনের মেলা হলে প্রায় ৩০ লক্ষের ভিড় হতো,’ ব্যাখ্যা ত্রিদিবের।
রবিবার ছিল বইমেলার ‘দশমী’। দেবীপক্ষের ওই দিনটা বিষাদমাখা। বইমেলার শেষ দিনটাও তাই। তবে আরও একটা জায়গায় দুর্গাপুজোর দশমী আর বইমেলার ‘দশমী’ মিলে যাচ্ছে। আসছে বছর আবার হবে।