• সস্তার রাজনীতিতে আত্মঘাতী বাঙালি! আলোচনায় ঋদ্ধি এবং অগ্নি
    এই সময় | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: দু’টো জিনিস কখনও ‘হ্যাপি এন্ডিং’–এর মুখ দেখে না। তার একটা হলো সাপ–লুডো খেলা। সাপের মুখে পড়ে ঘুঁটি ৯৭ থেকে ১৫–তে নেমে যাবে, নাকি সে আসলে শেষ সাপের মুখ পেরিয়ে গিয়েছে— এই নিয়ে তর্ক প্রথমে ঝগড়ায় পরিণত হয়। তার পর বোর্ড উল্টে সব এলোমেলো করে দিয়ে এড়াতে হয় অবশ্যম্ভাবী পরাজয়। অন্য যেটা কখনও ‘হ্যাপি এন্ডিং’ দেখে না, সেটা আলোচনার একটা বিষয়— ‘বাঙালি কি আত্মঘাতী?’

    বইমেলার শেষ দিনে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো ১৯০ নম্বর স্টলে— ‘এই সময়’–এর স্টলে। আলোচনায় অভিনেতা ও পরিচালক ঋদ্ধি সেন এবং রেডিয়ো জকি অগ্নি। তাঁরা জীবনের বহু অভিজ্ঞতায় পোড়খাওয়া নন। বাঙালির সংস্কৃতিকে তাঁরা কয়েক দশক ধরে দেখে আসছেন, এমনটাও নয়। তবু তাঁদেরই বেছে নেওয়ার কারণ সম্ভবত তারুণ্যের স্পর্ধা।

    আলোচনার শুরুতেই অগ্নির অকপট স্বীকারোক্তি, ‘এমন একটা সাবজেক্ট নিয়ে আমাদের বলতে দেওয়া হয়েছে, যার জন্য আর কিছু হোক না–হোক, ভীষণ ভাবে আমাদের ট্রোল করা যাবে।’ সে কথা শেষ হতে না–হতেই ঋদ্ধি বললেন, ‘অবশ্যই। আমাদের ‘পিছন পাকা’ বলার এমন সুযোগ কে আর ছাড়বে!’ তার পরেই তাঁর আপাত নিরীহ প্রশ্ন, ‘কিন্তু পাকার কথা উঠলে সবাই ‘পিছন পাকা’ বলে কেন? শুধু কি ওই জায়গাটাই পাকে?’ স্টলের চারপাশে ভিড় করে আলোচনা শুনতে আসা উৎসাহীদের মধ্যে তখন হাসির ফোয়ারা।

    বাঙালির সাংস্কৃতিক ও মানসিক অবনমন যে হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই দু’জনের। ঋদ্ধি বলেন, ‘১৯৮০–র দশকের শেষ দিক থেকে এটা ভয়াবহ গতি নিয়েছে। এর জন্য একমাত্র দায়ী সস্তার রাজনীতি।’ তাঁর মতে, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে ভাবে অযোগ্যদের সম্মান প্রদর্শনের পরিমাণ বেড়ে যায়, সেই ধারা থেকে রাজনীতিবিদরা আর সরেননি। তাই, সাধারণ বাঙালিও মেধার চর্চাকে জলাঞ্জলি দিতে দ্বিধা করেননি।’ অগ্নির বক্তব্য, ‘যে ভাবে গোটা দুনিয়াকে ইন্টারনেট ক্রমশ গ্রাস করে নিয়েছে এবং যে ভাবে সবাই রিল্‌সের নেশায় আসক্ত, তাতে মানসিক বিকাশ হওয়া খুবই কঠিন।’ তা ছাড়া আছে বাঙালির চিরকালীন ‘সব বুঝি, সব জানি’ মানসিকতাও।

    তবে বাঙালি এখনও নিজের নির্বুদ্ধিতা নিয়ে হাসতে পারে, নিজের সমালোচনা করতে ভোলে না। তাই, জাতি যে পুরোপুরি দিকভ্রষ্ট হয়েছে, এমন মনে করে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এবং এটাই সব চেয়ে আশার কথা।

  • Link to this news (এই সময়)