রনি চৌধুরী ■ ধূপগুড়ি
রোজই খবরে উঠে আসছে নারী নির্যাতনের ঘটনা। তাই মেয়েদের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকরা। অনেকেই চাইছেন তাদের আত্মরক্ষায় সক্ষম করে তুলতে। সে জন্য অন্যতম ভরসা ক্যারাটে। এই ক্যারাটে শিখিয়ে মেয়েদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলছেন সোমা। এর সাহায্যে নিজেও হয়ে উঠছেন স্বনির্ভর।
যে কোনও শনি ও রবিবার যদি কেউ আসেন ধূপগুড়ি পুরসভার ময়দানে, দেখতে পাবেন সাদা পোশাক পরে সারিবদ্ধ ছেলেমেয়েরা ক্যারাটের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। নানা শারীরিক কসরত করছে তারা। স্কুলের পড়াশোনা চালানোর ফাঁকে প্রতি সপ্তাহের শেষে এই পড়ুয়াদের মাঠে আসা চাই। তাদের সামনে কালো পোশাক পরা সোমা মণ্ডল। তিনিই দেন ক্যারাটে প্রশিক্ষণ। তাঁর কাছে ক্যারাটে শেখে শ'দেড়েক শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৬০ জনের মতো মেয়ে।
ধূপগুড়ি মহকুমার দেশবন্ধুপাড়ার বাসিন্দা সোমা মণ্ডল। ছোটবেলায় তাঁর আগ্রহ ছিল ক্যারাটের প্রতি। প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। তবে ক্যারাটে প্রশিক্ষক হবেন ভাবেননি। পরিবারের পরিস্থিতি তাঁকে নিয়ে এসেছে এই পেশায়। সোমার বাবা শান্তিকুমার মণ্ডল ছিলেন রাজ্য সরকারের কর্মচারী। তাঁদের দু’জনের সংসার। স্বনির্ভর হওয়ার তাগিদে স্নাতক হওয়ার পরে টিউশন পড়ানো শুরু করেন সোমা। টাকা জমিয়ে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নেন। এখন তিনি ক্যারাটের ব্ল্যাক বেল্ট।
৩৭ বছরের সোমার বাবা এখন অসুস্থ। সংসারের ভার তাঁর কাঁধে। তাই এই পেশাকে আঁকড়ে ধরেছেন তিনি। সোমা বলেন, ক্যারাটে প্রশিক্ষক সোমা মন্ডল বলেন, ‘মেয়েদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই আমি ক্যারাটে শেখানো শুরু করেছিলাম। এখন এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। বাবা–মায়েরাও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমিও চাই ছেলেমেয়েদের শেখাতে যাতে তারা নিজেদের সুরক্ষা নিজেরাই দিতে পারে।’ এলাকায় অনেক অভিভাবক আছেন, যাঁদের ক্যারাটে শেখানোর সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। তাঁদের বিনাপয়সায় প্রশিক্ষণ দেন সোমা।
এমন একজন ব্ল্যাক বেল্ট প্রশিক্ষককে হাতের কাছে পেয়ে খুশি অভিভাবকরা। তাঁদের একজন রিমা বসাক বলেন, ‘এখন যা অবস্থা, সেটা দেখে ক্যারাটেতে ভর্তি করেছি। সবসময়ে তো মেয়ের সঙ্গে থাকা সম্ভব নয়। ও যখন একা রাস্তাঘাটে চলাফেরা করবে, তখন যাতে নিজেকে রক্ষা করতে পারে, সেটাই আমাদের ভাবনা। সোমা মেয়ে বলে আরও সুবিধা, ওঁকে দেখে ছেলেমেয়েরা উৎসাহ পাচ্ছে।’
ময়দানে ক্যারাটের কসরত শিখতে আসা শিক্ষার্থীরা সত্যিই উৎসাহ পাচ্ছে। এক শিক্ষার্থী জিনিয়া দত্ত বলেন, ‘আমিই মাকে বলেছিলাম, ক্যারাটে শিখতে চাই। বন্ধুরা শিখছে, তাই আমারও ইচ্ছে হয়। এখন ক্যারাটে শিখতে ভালোই লাগছে। আগে রাস্তায় বেরোলে একটু ভয়–ভয় করত। আর ভয় লাগে না। এখন মনে হয় আমি একাই একশো।’
এ সব দেখে তৃপ্তি পান সোমা। বলেন, ‘আমার উপরেই সংসারের দায়িত্ব, তাই বেশ চাপ রয়েছে। মেয়েদের আত্মরক্ষার পাঠ দিতে ভালো লাগে। আয় করাটাই আমার উদ্দেশ্য নয়, ওদের স্বাবলম্বী করে তোলাই লক্ষ্য। তাই ক্যারাটে শিখিয়ে শান্তি পাই।’