• গাছে ফুটে আছে পলাশ, শিমুল, বসন্ত গাইছে ‘পরীক্ষা এসে গেছে’
    এই সময় | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • কৌশিক সেন ■ রায়গঞ্জ

    ‘শুনেছ কী ব’লে গেল সীতারাম বন্দ্যো?/আকাশের গায়ে নাকি টকটক গন্ধ?’ সুকুমার রায় লিখেছেন সেই কবে! নাহ্, বসন্তের বাতাসে তেমন টকটক গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু লগ্নজিতা চক্রবর্তী যত বার গাইছেন, ‘বসন্ত এসে গেছে...।’ তত বারই ওরা শুনছে, ‘পরীক্ষা এসে গেছে।’ পরীক্ষার নাম মাধ্যমিক। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। আর ওরা এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।

    দুয়ারে কড়া নাড়ছে, নাকি বসন্ত এসে গিয়েছে? গাছে গাছে পলাশ, শিমুল ফুটে আছে। বেশ জাঁক করেই পালিত হচ্ছে ‘ভ্যালেন্টাইন্স উইক’। শেষ মাঘের এমন পরিবেশে সকলেই একটু অন্য মেজাজে। কিন্তু ঘুম উড়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের। আজ, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ওরা। পরীক্ষার আগে ফাগুন, পলাশ— ওদের চোখে সবই যেন কেমন ফিকে লাগছে।

    অঙ্কিতা মোদক বলছে, ‘উফ্, কী যে টেনশন হচ্ছে, বলে বোঝাতে পারব না। একেই বোর্ডের প্রথম পরীক্ষা। তা-ও আবার অন্য স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। বই খুলে বসলে সব পড়া মনে পড়ছে। বন্ধ করলেই মনে হচ্ছে, কিছুই মনে নেই।’ তার সংযোজন, ‘গত বছর এই সময়টার কথা মনে পড়ছে। সে বার সরস্বতী পুজোয় খুব মজা করেছিলাম। সকাল থেকেই শাড়ি পরে প্রথমে স্কুল। তারপরে দলবেঁধে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা। আর এ বার। কোকিল ডাক শুনেও মনে পড়ে যাচ্ছে উপপাদ্যের কথা। আর ফাগুনের হাওয়া মনে করিয়ে দিচ্ছে ভূগোলের চ্যাপ্টার!’

    রীতম রায় নামে আর এক পরীক্ষার্থীর কথায়, ‘কয়েক দিন আগেও সে ভাবে কোনও চাপ ছিল না। হঠাৎ করেই গত সপ্তাহ থেকে অজানা এক ভয়ে আছি। প্রস্তুতি ঠিকঠাকই আছে। কিন্তু রাস্তায় বেরোলেই পাড়ার সিনিয়ররা ডেকে ডেকে পরীক্ষা নিয়ে এমন সব জ্ঞান দিচ্ছে, ভয় আরও বেড়ে যাচ্ছে। টেনশন থেকে একটু রিলিফ পেতেই একটু বাইরে বেরোচ্ছিলাম। এই অত্যাচারে সেটাও বন্ধ করে দিয়েছি।’

    রীতমেরও মনে পড়ে যাচ্ছে গত বারের সরস্বতী পুজোর কথা। সে বলছে, ‘এ বছর প্রতিমা বিসর্জনের সময়ে সবাই বলছিল— ‘আসছে বছর, আবার হবে...।’ আমি তখন ঘরে বসে সালফিউরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়াগুলিকে বাগে আনার চেষ্টা করেছি। মনে মনে শুধু বলেছি, আসছে বছর তো আর মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকবে না। আমার জন্যই মাকে আসতে হবে।’

    শম্পা সরকারের কথায়, ‘আগে ভাবতাম ফেব্রুয়ারি যত দেরি করে যায়, ততই ভালো। শীতের আমেজটা বেশ এনজয় করতাম। এ বার পরীক্ষার টেনশনে মনে হচ্ছে, ফেব্রুয়ারিটা যত তাড়াতাড়ি বিদায় নেয়, ততই মঙ্গল। গরমও হাসতে হাসতে সয়ে নেব। পরীক্ষাটা তো শেষ হয়ে যাবে!’

  • Link to this news (এই সময়)