সুমন ঘোষ, খড়্গপুর
মাংস উৎপাদনে ফের রাজ্যের মধ্যে সেরার শিরোপা পাচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। এ নিয়ে পরপর তিনবার সেরা হতে চলেছে জেলা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তর থেকে এই তথ্য মিলেছে। তাদের বক্তব্য, প্রতি বছরই জেলায় মাংসের উৎপাদন বেড়ে চলেছে। ছাগল, ভেড়া, শূকরের মাংস দ্রুত না বাড়লেও মুরগির মাংস উৎপাদনে বৃদ্ধিটা তিন বছর ধরে বেশ উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসনিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই জেলা ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে মুরগির মাংস উৎপাদন করেছে ১৬৪.০৫ হাজার টন। সেখানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনা মাংস উৎপাদন করেছে ১১৩.৮৭ হাজার টন। তৃতীয় স্থানাধিকারী জেলা পূর্ব বর্ধমান ১০০ হাজার টন মাংস উৎপাদন করেছে। বাকি জেলাগুলি সবাই ১০০ হাজার টনের নীচে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। মুরগির মাংস উৎপাদনের বৃদ্ধিটিও কিন্তু দেখার মতো।
২০২১-’২২ অর্থবর্ষেও এই জেলা মুরগির মাংস উৎপাদন করেছিল ১৩৮ হাজার টন। আর ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে উৎপাদন তার থেকেও কিছুটা বেড়ে হয় ১৪৭ হাজার টন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর চিন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের জেলায় প্রতি বছরই মুরগির মাংস উৎপাদন বেড়ে চলেছে। ফলে রাজ্যের মধ্যে পরপর তিনবার সেরার শিরোপা পেয়ে আমরা হ্যাটট্রিক করতে চলেছি। এতে শুধু আমাদের দফতরের আধিকারিক বা কর্মীরাই নন, এই পেশা বা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাও উৎসাহিত হবেন।’
এ হেন সাফল্যের কারণ কী? পশ্চিমবঙ্গ পোল্ট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদন মাইতির কথায়, ‘অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলাই তো মুরগি পালনের দিশা দেখিয়েছিল! এই জেলা প্রথম তো হবেই। শুধু জেলা কেন, এখন আমাদের রাজ্যও দেশের সকলকে পিছনে ফেলে মাংস উৎপাদনে প্রথম হচ্ছে।’ আর প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর চিন্ময়বাবু জানাচ্ছেন, ব্রয়লার পালনের জন্য সরকারি সংস্থা লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনও উৎসাহী যুবকদের এ ব্যাপারে সাহায্য করে। একজনের জমি ও পরিকাঠামো থাকলেই হল। মুরগির বাচ্চা, খাবার, ওষুধ থেকে যাবতীয় দেবে সরকারি সংস্থা। আবার চল্লিশ দিন পর ওই সংস্থাই ন্যায্য মূল্যে কিনে নেবে। তঁর কথায়, ‘ঝুঁকি ছাড়াই ৫ হাজার মুরগির ফার্ম বানালেই ১৫-২০ হাজার টাকা রোজগার রয়েছে। বড় ফার্ম হলে বেশি রোজগার।’ খড়্গপুরের একটি মুরগি খামারের মালিক শুভাশিস বেরাচৌধুরী বলেন, ‘সরকারি সংস্থার মতোই বেসরকারি নানা সংস্থাও একই ভাবে কাজ করছে। এটাই কম পুঁজির যুবকদের মুরগি পালনে উৎসাহিত করছে।’
মেদিনীপুর শহরে যেহেতু রাজ্য সরকারের বড় ‘হ্যাচিং ফার্ম’ রয়েছে, সেটিও সঙ্গত দিচ্ছে উপযুক্ত ভাবে। জানা গিয়েছে, সেখানে সপ্তাহে ১৬ হাজার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয়। ফলে এখান থেকে যেমন সরকারি ভাবে বিভিন্ন উপভোক্তাদের নিখরচায় মুরগির বাচ্চা দেওয়া হয়, তেমনই আবার সাধারণ ব্যবসায়ীরাও মুরগির বাচ্চা কিনে নিয়ে যায়। ফলে বাচ্চা মুরগির মৃত্যু হারও ভীষণ কম। তাতেও মিলছে সাফল্য। বিক্রির ক্ষেত্রেও কোনও ঝক্কি নেই। চিন্ময়বাবু জানান, জেলার চাহিদা পূরণের পর ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এবং উচ্চর–পূর্ব ভারতে চলে যাচ্ছে বাকি মুরগি। বিক্রির জন্য সাধারণ ব্যবসায়ীদেরও সাহায্য করে পশ্চিমবঙ্গ পোল্ট্রি ফেডারেশন। ফলে লাভের মুখ দেখছেন সাধারণ পালক থেকে বড় ফার্ম মালিকরাও। তাই নতুন নতুন ফার্ম বাড়ছে, বাড়ছে উৎপাদনও। তিনি আরও জানান, এখনও পর্যন্ত জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার ব্রয়লার ফার্ম রয়েছে। ১৪ লক্ষ মুরগি পালন হয় এমন ফার্মও রয়েছে।