অরূপকুমার পাল ■ ঝাড়গ্রাম
সবুজে সবুজ ক্যাম্পাস। মেহগনি, শিশু, সেগুনের সঙ্গে রয়েছে ছাতিম, রাধাচূড়া–কৃষ্ণচূড়া। এমনকী, আম–জাম, নিম, বকুলও রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে! অনেকেই সেই গাছ চেনেন। সেই গাছের ছায়ায় দু'দণ্ড কাটাতেও ভালোবাসেন অনেকে। কিন্তু যে গাছটির তলায় একদল ছাত্রছাত্রী আড্ডায় মশগুল, সেই গাছটির ‘অবদান’ কি জানেন ওই পড়ুয়ার দল? সত্যি বলতে কি, অনেকেই জানেন না, ওই গাছটা কতটা কার্বন–ডাই–অক্সাইড শুষে নিচ্ছে বা কতটা অক্সিজেন বাতাসে ছাড়ছে। তবে এ বার এই বিস্তারিত তথ্য মিলবে গাছের সামনে মোবাইল ফোনটি ধরলে!
এআই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এমনই একটি বিষয় উদ্ভাবন করেছেন ঝাড়গ্রামের সেবাভারতী মহাবিদ্যালয়ে পড়ুয়া-শিক্ষকেরা। ঝাড়গ্রাম জেলার একমাত্র পরিবেশবান্ধব কলেজ ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে উঠেছে জামবনি ব্লকের এই কলেজটি। ২০২৩ সালে এই কলেজে তৈরি হয় ‘নেচার ক্লাব এবং এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট’। মূলত, ওই নেচার ক্লাবের উদ্যোগে গবেষণামূলক এ ধরনের কাজ করা হয়েছে। ‘নেচার ক্লাবে’র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ক্যাম্পাসে রয়েছে ৮৮টি ছাতিম, ৪৮টি সেগুন, ২২টি আম, ৫টি নিম, ৭টি শিশু, রাধাচূড়া ও কৃষ্ণচূড়া ৭টি, বকুল গাছ একটি, মেহগনি ১২টি এবং অন্যান্য প্রজাতির বড়(পরিণত) গাছ ৩০টি। প্রতিটি গাছের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের উপরে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি গাছের বয়স ৫০ বছরের উপরে।
দুটি বৃহৎ মেহগনি এবং একটি বকুল গাছ কলেজে প্রাচীন গাছ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নেচার ক্লাব। দু’বছর ধরে প্রতিটি গাছের অবস্থান ও কাণ্ডের পরিমাপ, উচ্চতার তথ্য সংগ্রহ করে ‘নেচার ক্লাব এবং এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্টে’র সদস্য এবং শিক্ষকেরা। তারপর গবেষণা করে প্রতিটি গাছ থেকে কত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করেছে তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। প্রাচীণ একটি মেহগিনি গাছ ১ লাখ ২০ হাজার কেজি, ওই গবেষকদের দাবি, সাধারণ একটি মেহগনি গাছ ৭৩ হাজার ৪২২ কেজি, একটি রাধাচূড়া বা কৃষ্ণচূড়া ৮৫ হাজার ৬৫৭ কেজি, একটি ছাতিম গাছ ৯৭ হাজার ৮৯৪ কেজি, একটি সেগুন গাছ ৭৩ হাজার ৪০০ কেজি, একটি বকুল গাছ ৩৪ হাজার ৩১৫ কেজি, একটি শিশু গাছ ৭৩ হাজার ৪২০ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডল থেকে শোষণ করেছে। আর তার সম পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহও করেছে দাবি নেচার ক্লাবের।
‘নেচার ক্লাবে’র কো-অর্ডিনেটর তথা ভূগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক প্রণব সাহু বলেন, ‘এই সব তথ্যকে এআই প্রযুক্তির সাহায্যে ইনপুট করে নির্দিষ্ট কিউআর কোড তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে ওই কিউআর কোড–সম্বলিত বোর্ড গাছের গায়ে সাঁটানো হচ্ছে। পড়ুয়া থেকে অধ্যাপক-অধ্যাপিকা খুব সহজেই নিজেদের মোবাইলে কিউআর কোড স্ক্যান করে সংশ্লিষ্ট গাছটি সম্পর্কে তথ্য সহজে জানতে পারবেন।’ সেবাভারতী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ দেবপ্রসাদ সাহু বলেন, ‘কলেজ ক্যাম্পাসে প্রচুর গাছ থাকার জন্য আবহাওয়া ও পরিবেশ সুন্দর থাকে। সে জন্য কলেজে কোনও শীততাপনিয়ন্ত্রিত মেশিনের (এসি) ব্যবহার নেই। জেলায় এ ধরনের গ্রিন ক্যাম্পাস কোনও কলেজে নেই।’