মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতিতে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনার পর এ বার নড়েচড়ে বসল জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। জেলার সব হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসা পরিষেবা মিলছে কি না, স্বাস্থ্যকর্মীরা ঠিক মতো কাজ করছেন কি না, হাসপাতালের ন্যূনতম পরিকাঠামো ঠিক আছে কি না— এই সব কিছু খতিয়ে দেখতে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের টিম একাধিক গ্রামীণ হাসপাতাল, ব্লক প্রাথমিক হাসপাতাল পরিদর্শন শুরু করেছে। জানা গিয়েছে, সেখানে যে যে খামতি দেখা গিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গেই তা ঠিক করতে বলা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কাছে ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ চাওয়া হয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই এমন পরিদর্শন চালানো হবে বলেই জানা গিয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে ২১টি গ্রামীণ হাসপাতাল, ১৮টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র (১০ শয্যা বিশিষ্ট), দু'টি মহকুমা হাসপাতাল, চারটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
গ্রামীণ থেকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ক্ষেত্রে রোগীর পরিবার নানা সময়ে নানা অভিযোগ তুলে ধরেছেন। তার পরেও যে পরিস্থিতি খুব একটা বদল হয়েছে তা নয়।
‘রেফার রোগ’ থেকে নানা ভাবে হয়রানি, নানা অভিযোগ উঠেছে। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে এই জেলাতেই। তবে অভিযোগের পাল্লা যে বেশ ভারী, তা কিন্তু মানছেন জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারাই। সম্প্রতি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সিনিয়রদের উপস্থিতি ছাড়াই প্রসূতির সিজ়ারের অস্ত্রোপচার ও তার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যানাস্থেশিয়া করেন সাত জুনিয়র ডাক্তার। তার মধ্যে এক প্রসূতি মারা যান ও চার প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই ঘটনায় রিঙ্গার্স ল্যাকটেট (আরএল) স্যালাইনের পাশাপাশি কাঠগড়ায় ওঠে সিনিয়রদের অনুপস্থিতিতে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজও।
এর পরেই স্বাস্থ্য দপ্তর ওই মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার এবং অনুপস্থিত পাঁচ সিনিয়র ডাক্তারের পাশাপাশি সাত জুনিয়র ডাক্তারকে সাসপেন্ড করে। এই ঘটনার পর থেকে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর বেশ কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে বলে খবর। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গীকে এ ব্যাপারে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন হাসপাতালে আমরা পরিদর্শন বাড়িয়েছি এটা ঠিক। মানুষকে আরও ভালো পরিষেবা দেওয়ার সব চেষ্টাই আমরা করছি।’
জানা গিয়েছে, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা ইতিমধ্যেই একাধিক হাসপাতালে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকরা পাশের ব্লকের হাসপাতালে পরিদর্শন চালিয়েছেন। তেমনই নিয়ম করে দেওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘সমস্ত হাসপাতাল স্ক্যানারে রয়েছে। এটা একটা প্রক্রিয়া। চলতেই থাকবে। আগামী সপ্তাহেও বেশ কয়েক জায়গায় পরিদর্শন চালানো হবে।’