বিধান সরকার: মাধ্যমিক প্রত্যেক পড়ুয়ার জীবনে প্রথম বড় পরীক্ষা। সেখানে মায়ের মত ফার্স্ট ডিভিশন পেতে চায় মেয়ে। মাধ্যমিক প্রত্যেক পড়ুয়ার জীবনে প্রথম বড় পরীক্ষা। আর সেই পরীক্ষা দিতে যাওয়ায় কিছুটা ভয় কিছুটা উৎকন্ঠা কাজ করছিল স্নেহা হালদারের। চুঁচুড়া চকবাজারের বাসিন্দা স্নেহা হুগলি গার্সল স্কুলের ছাত্রী।বাড়ির কাছেই স্কুলে এতদিন পড়াশোনা তার। কিন্তু মাধ্যমিকের সিট পরেছে শিক্ষা মন্দির স্কুলে। বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে। কি ভাবে পরীক্ষা দিতে যাবে? ভাবনা ছিল।
স্নেহার মা শিবানী, বাবা মৃত্যুঞ্জয় হালদার দৃষ্টিহীন। ট্রেনে ভিক্ষা করেন। তাদেরই পথ চলতে মেয়ের সাহায্য নিতে হয়। কি হবে মেয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া? দুশ্চিন্তায় ছিলেন স্নেহার মা বাবা তখনই সহায় হলেন পুলিস কর্মী সুকুমার উপাধ্যায়ের। সুকুমার চন্দননগর পুলিসের কনস্টেবল। দৃষ্টিহীনদের নিয়ে কাজ করার সুবাদে স্নেহার মা- বাবার সঙ্গে তার পরিচয়। স্নেহার মা সুকুমারকে ভাইফোঁটা দেন সেই পরিচয়ের সুবাদে।
স্নেহার মাধ্যমিক পরীক্ষা তাই তাকে বোর্ড পেন থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দেন পুলিস মামা। পরীক্ষা কেন্দ্র যে স্কুলে, সেই স্কুল গতকাল দেখিয়ে নিয়ে আসেন তার বাইকে বসিয়ে। যদি স্নেহাকে এক একা যেতে হয় তার জন্য শ-দুয়েক খুচরো টাকাও দেন। পুলিসের কাজে ছুটি নেই। কখন, কোথায় যেতে হয়। তাই স্নেহাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেও ভাবনায় থাকেন যদি সময়ে যেতে না পারেন,যদি কাজ পরে যায়!
তবে আজ প্রথম পরীক্ষার দিন দূরে কোথাও কাজ পরেনি বলে সুকুমার স্নেহাকে নিয়ে সকাল সকাল পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেন। পুলিস মামার বাইকে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় স্নেহা তাই খুশি। পরীক্ষায় ভালো ফল করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় স্নেহা। মা বাবার সহায় হতে চায়। ভাইকে বড় করতে চায়। যে কষ্ট তাদের জন্য মা বাবা করছেন তাদের জন্য কিছু করতেই হবে তাকে। সেই লক্ষে এগিয়ে যেতে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা ভালো করে দিতে দিতে চায়।
তার মা শিবানী হালদার বলেন, আমিও মাধ্যমিক পাশ করেছি। ইচ্ছা থাকলেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাইনি। মেয়ে যতদূর চায় পড়ুক। সুকুমার আমাদের কাছে একজন পুলিস কর্মী না। স্নেহার মামা। তাই তার উপকার ভুলব না। কথায় বলে মামা ভাগ্নি যেখানে বিপদ নাই সেখানে। আমার মেয়েরও কোনও বিপদ হবে না সুকুমারের মত মামা থাকায়।