• বিধানসভায় মমতা ও শুভেন্দুর সাক্ষাতে বাড়ল রাজনৈতিক জল্পনা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোমবার রাজ্যের বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন শুরুর প্রথম দিনেই ফের মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতার মধ্যে সৌজন্য বিনিময়ের ছবি ধরা পড়ল। এদিন বিধানসভায় দু’জন মুখোমুখি হতেই রাজ্যপালকে স্বাগত জানাতে যাওয়া নিয়ে মমতা ও শুভেন্দুর সংক্ষিপ্ত কথোপকথনে সেই দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। এরপর অধিবেশন কক্ষেও পরস্পরকে নমস্কার ও প্রতি নমস্কার করতে দেখা যায়। যা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে ফের রাজনৈতিক গুঞ্জন ছড়িয়েছে। বিষয়টির কারণ জানতে চাইলে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘এটা একেবারেই সৌজন্যমূলক বিষয়। এর অন্য কোনও অর্থ খোঁজা উচিত নয়।’

    শুভেন্দু আরও বলেন, ‘আমি যখন অধিবেশন কক্ষে ঢুকছিলাম, তখন স্পিকারকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে আনতে যাচ্ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে দেখে রাজ্যপালকে স্বাগত জানাতে যেতে বলেন। প্রটোকল বলে, এই দায়িত্ব স্পিকারের। আমি তাই যাইনি।’

    প্রসঙ্গত রাজনৈতিক মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতা একে অপরের প্রবল বিরোধী। দেখেই মনে হয়, দুজনের মধ্যে আদা-কাঁচকলার সম্পর্ক। একসময়ে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রী হলেও বর্তমানে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য বিজেপির অন্যতম প্রধান মুখ। এই দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একে অপরের বিরুদ্ধে উত্তপ্ত বাক বিনিময় করতে দেখা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নাম না করলেও শুভেন্দুকে ‘গদ্দার’ বলে কটাক্ষ করেছেন। আবার শুভেন্দুও সরাসরি মমতাকে নাম করেই আক্রমণ করেছেন। তা সত্ত্বেও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর দুজনকে একাধিকবার মুখোমুখি হতে দেখা গিয়েছে। সেই সাক্ষাতে দুজনের মধ্যে ক্ষণেকের সৌজন্য বিনিময়ও হয়েছে। ২০২২ সালেই বিধানসভায় অধিবেশন চলাকালীন শুভেন্দুকে একবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কক্ষে ডেকে পাঠান। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বিরোধী দলনেতা দেখা করলেও, সেখানে তিনি একা যাননি। দলের আরও তিনজন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে যান। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে অভিষেকের একটি মন্তব্যে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হন শুভেন্দু। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু বিধানসভায় মমতার প্রতি নমস্কারে সেই জল্পনার অবসান ঘটে। এছাড়া গত শীতকালীন অধিবেশনেও মুখ্যমন্ত্রী-বিরোধী দলনেতার মধ্যে সৌজন্য বিনিময় করতে দেখা যায়। সোমবার আরও এক বার তা দেখা গেল।

    জানা গিয়েছে, সোমবার বিধানসভায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বাজেট বক্তৃতা দেওয়ার কথা। সেইমতো তিনি এদিন দুপুর দুটো নাগাদ বিধানসভায় আসেন। প্রথা মাফিক রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী ও স্পিকার। ফলে অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরনোর পথেই মমতা ও শুভেন্দুর সাক্ষাৎ হয়। মুখ্যমন্ত্রী তখন বিরোধী দলনেতাকে বলেন, ‘রাজ্যপালকে রিসেপশন করতে (স্বাগত জানাতে) যাবি না?’ প্রত্যুত্তরে মমতার পাশে থাকা স্পিকারের পিঠে হাত দিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘এটা স্পিকারের দায়িত্ব। আমার নয়।’

    তবে সৌজন্য বিনিময় হলেও বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে বিরোধী দলনেতা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানো বন্ধ করেননি। এদিন বিধানসভায় রাজ্যপালের বক্তৃতা চলাকালীন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা, আরজি কর কাণ্ড এবং জলজীবন মিশন প্রকল্পের নামবদল নিয়ে সরব হন শুভেন্দু। রবিবার আরজি করের নির্যাতিতার জন্মদিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ও কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে লক্ষ্য করে কড়া আক্রমণ শানিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)