আইসিডিএস কেন্দ্রগুলির সমস্যা খুঁজতে ময়দানে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা
বর্তমান | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কোথাও আইসিডিএস সেন্টারের বিল্ডিং নেই। কোনও সেন্টারে আবার বিদ্যুৎ, খাবার তৈরির সামগ্রী, জলের ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। জেলার প্রাইমারি স্কুলগুলোর ক্ষেত্রেও সেই একই ছবি। তবে এই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হল লোকবলের অভাব। শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হারও অনেকটাই কম। স্কুল কিংবা আইসিডিএসের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নানা সমস্যা রয়েছে। সেগুলি খুঁজে বের করতে মাঠে নেমে পড়েছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। বিগত এক মাস ধরে এই কাজ চলছে। তাতে দেখা গিয়েছে নদীয়া জেলায় বিভিন্ন সরকারি জায়গায় আড়াই হাজারের বেশি সমস্যাকে ‘নমিনাল’ এবং ‘ক্রিটিকাল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী দিনেও এই সমীক্ষার কাজ চলবে। সেই সঙ্গে এই সমস্ত সমস্যার দ্রুত কী করে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে।
নদীয়া জেলার জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ বলেন, ‘আমাদের আধিকারিকরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করছেন। সেইখানে যা সমস্যা রয়েছে, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। কোথাও যদি সমস্যা না থাকে, তাও অ্যাপের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে। এর ফলে কোথায় কী রকম সমস্যা রয়েছে, তা আমার জানতে পারছি।’
সরকারি পরিষেবা, সরকারি প্রতিষ্ঠানের হাল-হকিকৎ জানতে ক্ষেত্র সমীক্ষা করা হচ্ছে। একটি অ্যাপের মাধ্যমে সেই কাজ করছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। নবান্নের তরফ থেকেই এই অ্যাপ চালু করা হয়েছে। যার ফলে নবান্নে বসেই শীর্ষ আধিকারিক প্রত্যন্ত এলাকার সরকারি প্রতিষ্ঠানের সমস্যা দেখতে পাচ্ছেন। রাস্তা, রেশন ডিলার শপ, কর্মতীর্থ, বাংলা সহায়তা কেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জল সরবরাহের পাইপ লাইন সহ বিভিন্ন সরকারি জায়গা ভিজিট করছেন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকরা। পরিদর্শনের সময় সংশ্লিষ্ট জায়গা থেকেই সেখানে কী কী সমস্যা রয়েছে, তা চিহ্নিত করছেন তাঁরা।
বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক পৃথক মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন, আইসিডিএস সেন্টারের ক্ষেত্রে অ্যাপ্রোচ রোড, বিদ্যুৎ সংযোগ, খাবার তৈরির সামগ্রী, লোকবল, ভবন, শৌচাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। আবার রাস্তার ক্ষেত্রে নয়ানজুলির ব্যবস্থা, রাস্তার হাল, আসবাব পত্র, রাস্তার ধারের ড্রেনের ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন দিক দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন সমস্যাকে নমিনাল, ক্রিটিকাল এবং নো ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীয়া জেলায় বিগত এক মাসে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার জায়গায় পরিদর্শন করা হয়েছে। যার মধ্যে ক্রিটিক্যাল সমস্যা পাওয়া গিয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচশোটি জায়গায়। নমিনাল সমস্যা রয়েছে প্রায় দু’হাজার জায়গায়। আর ‘নো ইস্যু’ পাওয়া গিয়েছে প্রায় তিন হাজার জায়গায়।
কৃষ্ণনগর সদরের মহকুমা শাসক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, ‘মূলত আইসিডিএস সেন্টার, প্রাথমিক স্কুলগুলোতে বেশি জোর দিচ্ছি। সেখানে উপস্থিতির হার অনেকটাই কম। এছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষিকার সমস্যা রয়েছে।’ নাকাশিপাড়া ব্লকের বিডিও স্নেহাশিস দত্ত বলেন, ‘বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিকাঠামোর সমস্যা তুলনামূলক কম। তবে বিভিন্ন জায়গায় সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। সেইসঙ্গে লোকবলের সমস্যাও আমার চিহ্নিত করেছি। কৃষ্ণনগর-১ ব্লকের বিডিও রঞ্জন সর্দার বলেন, ‘আমাদের ব্লকে আমরা পরিদর্শনের উপর বেশি জোর দিয়েছি। আইসিডিএস, স্কুল বাদে বাকি সরকারি প্রকল্পগুলোতে ক্রিটিক্যাল সমস্যা সেরকম নেই। আমরা এই কাজ অব্যাহত রেখেছি।’ -নিজস্ব চিত্র