নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: মেমারি-২ ব্লকের পাহাড়হাটির ধুনুই গ্রামের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শুভদীপ রায়। রবিবার সন্ধ্যায় সে বাড়ির দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিল। বাবাকে গাড়ি ঢোকানোর জন্য সাহায্য করছিল। হঠাৎই তার মাথা ঘুরে যায়। বাড়ির লোকজন তাকে ঘরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ বসিয়ে রাখে। কিন্তু পরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বাবা-মা চিন্তায় পড়ে যান। তাকে তড়িঘড়ি পাহাড়হাটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক জানান, ব্রেনস্ট্রোক হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু তার অবস্থার উন্নতি এখনও হয়নি। শরীরের একদিক অবশ হয়ে রয়েছে। পরীক্ষার প্রথম দিন হাসপাতালের বেডে শুয়েই তাকে কাটাতে হয়। বাকি পরীক্ষাগুলি সে দিতে পারবে কি না তা নিয়ে নিশ্চয়তা নেই। এত কমবয়সে ব্রেনস্ট্রোক শুনে চিকিৎসকরা অবাক হয়ে যাচ্ছেন। জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম বলেন, অল্পবয়সিদের মধ্যে ব্রেনস্ট্রোকের প্রবণতা বাড়ছে। এটা যথেষ্ট উদ্বেগের।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনার পর থেকেই অল্পবয়সিদের ব্রেনস্ট্রোক বেড়েছে। ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু ১৬ বছর বয়সেও পড়ুয়াদের ব্রেনস্ট্রোক হচ্ছে-এমনটা খুব বেশি দেখা যায়নি। ওই ছাত্রর বাবা স্বপন রায় বলেন, ছেলে পাহাড়হাটি হাইস্কুলে পড়াশোনা করে। ওর কুচুট হাইস্কুলে সিট পড়েছিল। পরীক্ষার জন্য ভালোভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছিল। সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। রবিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে যায়। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো গ্যাসের জন্য ও অসুস্থ হয়ে হয়েছে। বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে যাবে মনে হয়েছিল। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ওর শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পাহাড়হাটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকদের কথা শুনে মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড় হয়। ছেলের ব্রেনস্ট্রোক হয়েছে বলে জানানো হয়। ওর জন্য খুব চিন্তায় আছি। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের মেন্টর মহম্মদ ইসমাইল বলেন, ওই ছাত্রটি পরীক্ষা দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে ছিল না। হাসপাতালে অসুস্থ ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। ওই ছাত্রটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। চিকিৎসার জন্য সব রকমভাবে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ওই ছাত্রর চিকিৎসা চলছে। ধীরে ধীরে ওই ছাত্রটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হবে বলে চিকিৎসকদের অনুমান। তবে, এবার হয়তো তার আর পরীক্ষায় বসা হবে না। সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক এমন প্রার্থনা করেছে তার সহপাঠীরা। সামনের বছর সে ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারবে বলে তারা আশাবাদী। নিজস্ব চিত্র