পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে তৎপর প্রশাসন, হাতির হানা বাঁচিয়ে পরীক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা বনদপ্তরের
বর্তমান | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর : রাস্তার দু’ধারে ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গলের ভিতর দিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা। জঙ্গলে হাতি থাকায় ছাত্রছাত্রীদের কনভয় করে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে গেল বনদপ্তর। এমনকী পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয় ড্রপ গেট। এছাড়া বিভিন্ন জঙ্গলের চারপাশ ঘিরে রাখলেন বনকর্মীরা। প্রথম দিনে জঙ্গলমহলের দুই জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রশ্নে কার্যত লেটার মার্কস পেল বনদপ্তর। দুই জেলাতেই দপ্তরের কাজে খুশি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গ্রামবাসীদের কথায়, দুই জেলায় বিভিন্ন জঙ্গলে বিপুল সংখ্যায় হাতির দল রয়েছে। তাই আতঙ্কিত ছিলেন গ্রামের মানুষরা। রবিবার রাত থেকেই বনদপ্তরের আধিকারিকরা মাইকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষার্থীদের পাশে থাকার বার্তা দেন। এতে মনোবল বেড়েছে ছাত্রছাত্রীদের।
রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের পাশে বনদপ্তর সর্বদা থাকবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তিনটি বনবিভাগ রয়েছে। মেদিনীপুর, রূপনারায়ণ ও খড়্গপুর। এই সব জায়গায় শতাধিক হাতি রয়েছে। তার মধ্যে শুধু মেদিনীপুর বনবিভাগ এলাকায় রয়েছে ৮৯টি হাতি। জানা গিয়েছে, রবিবার রাত থেকেই বিশেষ তৎপর ছিল বনদপ্তর। হাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে গভীর রাত থেকেই হাতির গতিবিধির উপর বিশেষ নজরদারি চালান বনদপ্তরের আধিকারিকরা। এদিন সকাল থেকে জঙ্গল লাগোয়া এলাকা নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়। বনদপ্তরের আধিকারিকের কথায়, জঙ্গল শুরুর কিছুটা আগেই ড্রপ গেট তৈরি করা হয়েছিল। সেই গেটে ছাত্রছাত্রীদের অপেক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশেষ কনভয়ের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। সেইমতো কনভয়ের সামনে রাখা হয় বনদপ্তরের বিশেষ ঐরাবত গাড়ি। সেই গাড়িতে বিশেষ সাইরেন বাজানো হয়েছে। ঐরাবতের পিছনে ছিল ছাত্রছাত্রীদের গাড়ি। এছাড়া কনভয়ের শেষেও ছিল বনদপ্তরের গাড়ি। মেদিনীপুর ও রূপনারায়ণ ডিভিশনের গোয়ালতোড়, মহালিসাই, হুমগড়, চাঁদড়া, নয়াবসত, লালগড় রেঞ্জ এলাকায় সবচেয়ে বেশি নজরদারি চালান বনদপ্তরের আধিকারিকরা। পাশাপাশি খড়্গপুর বনবিভাগ এলাকায় কর্মীরা তৎপর ছিলেন।
এদিন চাঁদড়া হাইস্কুলের ছাত্র অমিত মাহাত পরীক্ষা দিতে এসেছিল নয়াগ্রাম হাইস্কুলে। সে জানায়, হাতির ভয় রয়েছে। কিন্তু বনদপ্তরের আধিকারিকরা ভালোভাবেই পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছেন। প্রচুর মানুষ থাকায় ভয় লাগেনি। একা বাবার সঙ্গে এলে হয়তো ভয় লাগত।
অপরদিকে, ঝাড়গ্রাম জেলার তিনটি বনবিভাগ এলাকাতেও প্রচুর পরিমাণে হাতি রয়েছে। পাশাপাশি বেলপাহাড়ীর জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় বাঘের আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামবাসীরা।
এদিন, হাতির করিডর সংলগ্ন ২০টি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বনবিভাগের ১০টি গাড়ি বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি চালিয়েছে। এরফলে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পেরেছে পরীক্ষার্থীরা। অপরদিকে, পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বাস ও বাসস্টপের সংখ্যাও বাড়ানো হয়। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলেন, জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে নির্বিঘ্নে যাতে যাওয়া-আসা করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।-নিজস্ব চিত্র