অদম্য জেদ, পরীক্ষা দিলেন মুরারইয়ের দৃষ্টিহীন দুই বোন
বর্তমান | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: রাইটার নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে বসেছে জন্মান্ধ দুই বোন সরস্বতী ও রূপালী রবিদাস। তাদের বাড়ি মুরারই থানার বনরামপুর গ্রামে। তাদের বাবা নিতাই রবিদাস রাজগ্রামে পাথর ভাঙার কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু শত অভাব অনটনেও নিতাই দুই মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ করে দেননি। মুরারইয়ের রাজগ্রাম এসআরআর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে তারা এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। দৃষ্টিশক্তিহীন হওয়ায় দুজনকে সঙ্গে রাইটার রাখার সুযোগ দিয়ে তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয় রাজগ্রাম মহামায়া হাইস্কুলে। তাদের সঙ্গে রাইটার হিসেবে রয়েছে এলাকারই দুই ছাত্রী সৃজনী পারভিন ও মোসাম্মাৎ হাসি। এদিন দুই অন্ধ মেয়েকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে আসেন মা চিন্তা রবিদাস। তিনি বলেন, তিন সন্তানের মধ্যে সরস্বতী মেজো ও রূপালী ছোট। তাদের এক দাদা আছে। সরস্বতীর বয়স ১৯। রূপালি তার দু’ বছরের ছোট। আর্থিক অভাবের কারণে ছেলেকে পড়াতে পারেননি। কিন্তু দুই মেয়ে পড়াশোনার জন্য জেদ ধরায়, কষ্ট করেও তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনার প্রতি আসক্তি আরও বেড়ে যায় ওদের। তারা দৃষ্টিহীন হয়েও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্কুলে পড়েছে। শিক্ষকদের মুখ থেকে শুনে শুনে তারা পড়া মুখস্থ করেছে। ওদের লক্ষ্য বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার। দুজনেই বলে, বাবার হাড়ভাঙা খাটুনি উপলব্ধি করে খুব কষ্ট হয়। পড়াশোনা করে শিক্ষিকা হতে চাই। আমাদের মতো অন্ধ ছাত্রছাত্রীদের আলোর পথে নিয়ে আসতে চাই। নিতাইবাবু বলেন, ওরা দুজনেই জন্মান্ধ। আর্থিক অভাবের কারণে ওদের ভালো চিকিৎসা করাতে পারেননি। তবে দুজনেরই ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ রয়েছে। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জেরে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। একটি বিষয় একবার শুনলেই তারা স্মরণে রাখতে পারে। আগে দুই মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলেও এখন তাদের নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছি। এদিন পরীক্ষা দিয়ে সরস্বতী ও রূপালি দুজনেই জানায়, বাংলা পরীক্ষা ভালো হয়েছে। -নিজস্ব চিত্র