প্রচার সত্ত্বেও অসদুপায় অবলম্বনে মাধ্যমিকের প্রথম দিনেই পরীক্ষা বাতিল তিন ছাত্র-ছাত্রীর
বর্তমান | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এত প্রচার সত্ত্বেও মাধ্যমিকের প্রথম দিনেই অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে পরীক্ষা বাতিল হল তিন পরীক্ষার্থীর। তার মধ্যে দু’জনই আবার ছাত্রী। আলিপুরদুয়ারের নিউটাউন গার্লস স্কুলে এক ছাত্রী পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যেই ফোন নিয়ে ঢুকে পড়ে। হাওড়ার বালি শান্তিরাম বিদ্যালয়ে স্মার্টওয়াচ নিয়ে ঢুকে পড়ে এক পরীক্ষার্থী। প্রায় একঘণ্টা বাদে তাকে ধরতে সক্ষম হন পরিদর্শক। হুগলির চণ্ডীতলার গরলগাছা গার্লস স্কুলে বোনের হয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল দিদি! ধরার পড়ার ফলে বোনের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে ৫৫ জন হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা দিয়েছে। এমন খণ্ডচিত্র বাদ দিলে এদিনের পরীক্ষা সার্বিকভাবে নির্বিঘ্নেই মিটেছে।
এবার অবশ্য প্রশ্নপত্র ভাইরাল হওয়ার ঘটনা রুখতে সমর্থ হয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। নতুন একটি সুরক্ষা পদ্ধতি প্রশ্নপত্রে যুক্ত করেছে তারা। প্রশ্নপত্রে উল্লম্বভাবে, অর্থাৎ উপর থেকে নীচ পর্যন্ত জলছাপের মাধ্যমে সিরিয়াল নম্বরটি লেখা হয়েছে। একেবারে প্রশ্নপত্রের মাঝ বরাবর থাকায় সেটিকে এড়িয়ে ছবি তোলার কোনও উপায় থাকবে না। আর কোনওভাবে ছবিতে সেই সিরিয়াল নম্বরের ছবি উঠে গেলে খুব সহজেই চিহ্নিত করে ফেলা সম্ভব সেই ‘কীর্তিমানকে’। প্রশ্নপত্র ভাইরাল না-হলেও ইনস্টাগ্রামে বিভ্রান্তি ছড়াতে সচেষ্ট হয় একটা শ্রেণি। এক জায়গায় টেস্ট পেপারে প্রশ্নপত্র তুলে, আরেক জায়গায় গত বছরের প্রশ্নপত্রের ছবি আপলোড করে দাবি করা হয়, এবছরের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। পর্ষদ এই অভিযোগ কলকাতা পুলিসের সাইবার থানা এবং বিধাননগর পূর্ব থানায় জানিয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। মালদহে বাড়তি নজরদারি থাকায় প্রথম দিন অন্তত নির্বিঘ্নেই কেটেছে। বরং টোকাটুকির ছবি ধরা পড়েছে জলপাইগুড়ির কিছু কেন্দ্রে। উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গে জঙ্গল সংলগ্ন এলাকাগুলিতে বনকর্মীরা গাড়িতে বা বিশেষ এসকর্ট করে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দেন।
এবার অন্য একটি সমস্যায় ভুগতে হয়েছে বেশকিছু স্কুলকে এবং পড়ুয়াদের। প্যাকেটে প্রশ্নপত্রগুলি একটির মধ্যে আরেকটি ঢুকে গিয়েছিল। ফলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল, প্রশ্নপত্র কম রয়েছে। একটি স্কুলের তরফে অভিযোগ আকারে পর্ষদে আসে বিষয়টি। তখনই পর্ষদ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, প্রশ্নপত্র সঠিক সংখ্যায় রয়েছে। স্রেফ একটি আরেকটির মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। পর্ষদে নমুনা হিসেবে আসা প্রশ্নপত্রেও দেখা গিয়েছে তা। তখন সমস্ত সেন্টারেই পর্ষদের তরফে পরীক্ষা শুরুর আগে জানিয়ে দেওয়া হয় এই সমস্যার কথা।
যদিও বিধাননগরের একটি সরকারি স্কুলে পরীক্ষা শুরুর পরেও প্রশ্নপত্রের বিভ্রাট এড়ানো যায়নি। সেখানে কয়েকজনকে জোড়া প্রশ্নপত্র বিলি করা হয়ে যায়। আর প্রশ্নপত্র কম থাকায় অনেককে তা দেওয়াও যায়নি! পরে পরীক্ষার্থীরাই প্রশ্নপত্র খুলে সেটি আবিষ্কার করে। তাই সিরিয়াল নম্বর মেলানোর জন্য সবার থেকে প্রশ্নপত্র ফেরত নিয়ে নতুন করে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় নষ্ট হয় ১৫ থেকে ২০ মিনিট। লেখার জন্য বাড়তি সময়ও দেওয়া হয়নি তাদের। তাই লেখা শেষ করতে পারেনি তারা। বাইরে এসে, ওই ছাত্ররা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। পর্ষদের এক কর্তা বলেন, যথাসময়ে জানানোর পরেও স্কুলটিতে এরকম সমস্যা কেন হয়েছে, তা খোঁজ নেওয়া হবে।