ওষুধ-সারের দামবৃদ্ধি, বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে উত্তর লিখল পড়ুয়ারা
বর্তমান | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: মেমারির ঝিকরা গ্রামের রিজন রহমান এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। সে কৃষক পরিবারের সন্তান। আলু এবং ধান চাষ করে তাদের সংসার চলে। কেন্দ্রীয় সরকার সারের দাম অনেক বাড়িয়েছে। তা নিয়ে তার বাবা প্রায়দিনই বাড়িতে চাষের সমস্যার কথা বলেন। তাই মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চাষের সামগ্রীর দাম বাড়ায় কী সমস্যায় পড়েছে মধ্যবিত্ত পরিবার তা সে নিজেই অনুভব করে। সোমবার মাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় ‘নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ রচনা’ করার জন্য বলা হয়েছিল। ১৫০শব্দের মধ্যে তা লিখতে বলা হয়। এমন প্রশ্নের উত্তর রিজনকে মুখস্থ করে লিখতে হয়নি। বাস্তব অভিজ্ঞতার ছবি সে খাতায় ফুটিয়ে তুলেছে।
বর্ধমানের ইছলাবাদের এক ছাত্র ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি পরীক্ষায় খাতায় তুলে ধরেছে। ওই ছাত্র বলে, দাদু বহু বছর ধরে অসুস্থ। দাদুর জন্য চার-পাঁচরকম ওষুধ কিনতে হয়। বাবা বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করে। মূল্যবৃদ্ধির জন্য ওষুধ কিনতে কী সমস্যা হয় তা ভালোভাবেই টের পাই। তাই এই বিষয়টি নিয়ে রচনা আসায় তা লিখতে সমস্যা হয়নি। ওই দু’জনের মতো বহু ছাত্রই নিজেদের অভিজ্ঞতার বাস্তব ছবি খাতায় ফুটিয়ে তুলেছে। রথতলা মনোহরদাস বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মূল্যবৃদ্ধির বিষয় নিয়ে প্রতিটি ছাত্রছাত্রী অবহিত। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাশাপাশি জিএসটি চালু হওয়ায় পড়াশোনার বিভিন্ন সামগ্রীর দামও বেড়ে গিয়েছে। প্রতিটি ছাত্রছাত্রী নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়েই এই প্রশ্নের উত্তর লিখবে।
অভিভাবক কৃষ্ণেন্দু দাস বলেন, সময় উপযোগী প্রশ্ন এসেছে। মূল্যবৃদ্ধির ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারে নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা তা বাড়িতে টের পাচ্ছে। এই বিষয়ের উপর প্রতিটি পড়ুয়া নিজেদের মতো করে উত্তর লিখবে। এধরনের বাস্তব বিষয়ের উপর প্রশ্ন এলে ছাত্রছাত্রীদের সাধারণ জ্ঞানের প্রমাণ পাওয়া যায়। আগে নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ের উপর রচনা আসত। ছাত্রছাত্রীরা তা মুখস্থ করে এসে খাতায় লিখত। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের মতো বিষয়ের সঙ্গে তারা নিজেরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের লিখনী শক্তির প্রমাণ পাওয়া যাবে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোনার বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিটি সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে আমজনতাকে বিপাকে ফেলেছে। সার, ওষুধ থেকে শুরু করে পেট্রপণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের এই বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত থাকা দরকার।
বাংলা প্রশ্নপত্রে মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া ‘জলের অপচয় রোধে সচেতনতা শিবির’ এর উপরও রচনা লেখার সুযোগ ছিল। ওই দু’টি বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয়ের উপর রচনা লেখার জন্য বলা হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলেন, দু’টিই সামাজিক সমস্যা। জলের অপচয় হওয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় রয়েছে। আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঠেলায় বর্তমান জীবন ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছে।