নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: শীত বা বর্ষায় উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার ‘বর্তির বিল’ আকর্ষণের কেন্দ্রে চলে আসে। পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। ফটো তুলতে ভিড় জমান তরুণী-তরুণীরা। বিলের চারপাশের প্রাকৃতিক শোভা অপরূপ। নির্জন এলাকাটি গমগম করত এক সময়। পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের লাল আলোয় মেখে এমনই দর্শনীয় হয়ে ওঠে বিলটি যে মানুষ ঠায় অপেক্ষা করেন সন্ধ্যা পর্যন্ত। যে বিল ঘিরে এত মানুষের এত টান, সেটির দশা ক্রমে বেহাল হয়ে পড়ছে। পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ।
এসব কারণে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। পর্যটক সংখ্যাও কমছে। দূষণের কারণে কমছে জলজ প্রাণী। অবস্থা বেঠিক দেখে এবার টনক নড়েছে সবার। বর্তির বিল নতুন করে সাজিয়ে তোলা ও সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে ব্লক প্রশাসন ও পর্যটন দপ্তর। একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। পশু-পাখিদের জন্যও নয়া ভাবনাও ভাবা হচ্ছে। এই কাজে পরিবেশবান্ধব একাধিক বেসরকারি সংস্থার মতামত নিচ্ছে প্রশাসন। বিলটি নতুন করে সাজিয়ে তুলতে ৫০ কোটি টাকার মতো বাজেট ধরা হয়েছে। শুরু হচ্ছে ডিপিআর তৈরির কাজ।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকশো বিঘা জমিজুড়ে রয়েছে বর্তির বিল। আগে শতাধিক পরিযায়ী পাখি ও পঞ্চাশেরও বেশি জলজ প্রাণী থাকত। কিছু স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপেরও দেখা মিলত। কিন্তু সে পাখি-প্রাণী এখন নেই। বিলের চারপাশ ভরেছে আবর্জনায়। প্লাস্টিকে ঢেকে গিয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। লুকিয়ে চলে নেশাভাঙের আসর। বিল সংস্কার না হওয়ায় সব মহলেই আক্ষেপ তৈরি হয়েছে। এবার আমডাঙার বিডিও নবকুমার দাসের উদ্যোগে সংস্কারের কাজ শুরু হতে চলেছে। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই কয়েক দফায় বিল পরিদর্শন করা হয়েছে। সম্পূর্ণ প্লাস্টিক মুক্ত করার পরিকল্পনা হয়েছে। নিরুদ্দেশ হওয়া পাখি, জলজ প্রাণী বাঁচানোর জন্য আলাদা জায়গা রাখা হবে। বিলের আশেপাশে গাড়ি চলাচল করবে না। প্রবেশ করতে হবে দূষণমুক্ত যানে। বিলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষের রোজগার বৃদ্ধি পাবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা বিভিন্ন সামগ্রী ও খাবার বিক্রি করার স্টল দেবেন। এছাড়াও থাকবে হোম স্টে’র ব্যবস্থা। বিলে রাত কাটানোর জন্য প্রমোদতরী রাখার পরিকল্পনাও হচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়ে। বিডিও বলেন, ‘আমরা যে ভাবনা নিয়েছি তার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ হয়েছে। বড় কাজ। তাই চূড়ান্ত হতে সময় লাগবে। বিলের ভোলবদল হবে নিশ্চিতভাবে।’-নিজস্ব চিত্র