• বাঘের বুদ্ধির কাছে ‘হার’ মানলেন বনকর্মীরা, পুরনো ছকে আর মিলল না সাফল্য
    বর্তমান | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ‘মৈপীঠে এর আগে একাধিকবার বাঘ ঢুকেছিল। ফিরেও গিয়েছিল। এবার কি সেই একই বাঘ আবার ঢুকেছে? এবং বনবিভাগের পুরনো কৌশল বুঝে তাদের ফাঁদে পা দেয়নি? সোমবার বাঘের আক্রমণের পর উঠছে এই প্রশ্ন। বাঘ যে এভাবে চোখে ধুলো দেবে তা সম্ভবত বুঝতেই পারেননি বনবিভাগের পোড় খাওয়া কর্তারা।


    আগে কি কৌশল নিয়েছিল বনবিভাগ? আগে বাঘের বিচরণক্ষেত্রের তিন দিক জাল দিয়ে ঘিরে নদী লাগোয়া জঙ্গলের দিক রাখা হতো ফাঁকা। বাঘকে লোকালয় থেকে জঙ্গলে পাঠানোর এই কৌশল একাধিকবার কাজেও দিয়েছিল। মৈপীঠে যতবার বাঘ ঢুকেছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই স্ট্র্যাটেজিতে সাফল্য এসেছে। কখনও ফাটানো হয়েছে পটকা। বাঘকে এভাবে ভয় দেখানো হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে আবার সে নিজেই তার ডেরায় ফিরে গিয়েছে। কিন্তু নগেনাবাদ থেকে বাঘকে জঙ্গলে পাঠানোর এই কৌশল সোমবার খাটলো না।  ধূর্ত বাঘটির চালাকিতে একপ্রকার হার মানতে হল বনবিভাগকে। তাদের সমস্ত পরিকল্পনা ব্যর্থ করে আলাদা পথে গ্রামের অন্য দিকে চলে আসে বাঘ। এবং দিনের আলোয় আক্রমণও করে বসে।


    গ্রামবাসীদের বক্তব্য, বনবিভাগের কর্তারা একপ্রকার আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, গ্রামে প্রবেশের দিকগুলি ঘিরে রাখা হলে লোকালয়ের কাছে আসার জায়গা পাবে না বাঘ। বাধ্য হয়ে আবার জঙ্গলে ফিরে যাবে। কিন্তু এবার তেমন ঘটনা ঘটল না। সম্ভবত বাঘটি আগের ফন্দি আন্দাজ করে গ্রামের দিকে পেতে রাখা জালের ফাঁকফোকর খুঁজে পায়। তারপর সে ফাঁক গলে ফের ঢোকে গ্রামে। নদীর দিকে পা-ই বাড়ায়নি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিএফও নিশা গোস্বামীও বলেছেন, ‘বনকর্মীরা গ্রামে তল্লাশি করেন। জাল দিয়ে গ্রাম লাগোয়া তিনদিক ঘিরে দেন। নদীর দিকে খোলা রাখা হয়েছিল যাতে বাঘ রাতে জোয়ারের সময় জঙ্গলে ফিরে যায়। কিন্তু তা না করে অন্য দিক দিয়ে গ্রামের কোনও এক দিক দিয়ে ঢুকে পড়ে সে।’


    অন্যদিকে প্রশ্ন উঠেছে বনদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে। যে পদ্ধতিতে বাঘ খোঁজার অভিযান হয়েছে তা সুরক্ষিত কি না তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। নিয়ম অনুযায়ী, এই পরিস্থিতি তৈরি হলে বনকর্মীদের সঙ্গে জাল ও পটকা থাকা বাধ্যতামূলক। কারণ মূল উদ্দেশ্য হবে, বাঘকে ভয় দেখিয়ে জঙ্গলে ফেরত পাঠানো। কিন্তু এদিন কিছুই ছিল না বা ব্যবহার হয়নি বলে অভিযোগ। পূর্বের অভিযানগুলিতে নিখুঁত পরিকল্পনা করে বাঘকে জঙ্গলে পাঠানোর কাজ করেছিলেন বনকর্মীরা। কিন্তু এবার বাঘের চালাকি বুঝতে ব্যর্থ তারা। এমনকি জখম বনকর্মী গণেশ শ্যামলের দাদাও বলেছেন, ‘গণেশের একটি হাত বাঘ মুখে পুরে নিয়েছিল। কোনরকমে ছাড়ানো সম্ভব হয়েছে। ঘুমপাড়ানি গুলি সঙ্গে ছিল না। আমরা প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে এসব কাজ করি।’


    এখন বাঘ রয়েছে গ্রামের আশপাশে। ফলে প্রবল আতঙ্ক। থমথমে পরিবেশ। এরই মধ্যে চলছে মাধ্যমিক। সবমিলিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় গোটা গ্রাম।
  • Link to this news (বর্তমান)