• ভোররাতে দুরন্ত অভিযান, ছাগলের টোপে খাঁচাবন্দি কুলতলির রয়্যাল বেঙ্গল
    এই সময় | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • স্বস্তি ফিরল কুলতলিতে। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৩টে বেজে ৩২ মিনিট নাগাদ খাঁচাবন্দি হলো রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। সূত্রের খবর, সেখানে সবজি খেতের মধ্যে ২টি খাঁচা পাতা হয়েছিল। টোপ হিসেবে রাখা হয়েছিল ছাগল। সেই টোপ গিলেই খাঁচায় ধরা দেয় সে।

    ডিএফও নিশা গোস্বামী জানিয়েছেন, বাঘটি একটি পুরুষ বাঘ, বয়স ১০ বছরের মতো। প্রথমে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। তার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে পুরোপুরি ফিট থাকলে এ দিনই গভীর জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে তাকে। ঠিক কী কারণে বাঘটি লোকালয়ে চলে এসেছিল, তা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেননি ডিএফও।

    তিনি বলেছেন, ‘এর পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। অনেক সময় এক জায়গায় বাঘের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে, ওরা লোকালয়ে চলে আসে। আবার অনেক সময় জঙ্গলের ভিতর মারামারি করে তারা লোকালয়ে চলে আসে। কোনও একটি নির্দিষ্ট কারণ বলা যাবে না।’

    এ দিকে বাঘটি ধরা পড়ায় স্বস্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জানিয়েছে, তাদের এলাকায় মাঝে মধ্যে বাঘ দেখা যায়। তবে এর আগে এই ভাবে পুরোপুরি লোকালয়ে চলে আসতে দেখা যায়নি। তাই গত রবিবার থেকে অত্যন্ত আতঙ্কের মধ্যে ছিল তারা। রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল। বাঘ ধরা পড়ার খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে যায় এলাকায়। তাকে দেখতে ঘটনাস্থলে ভিড় জমান বহু মানুষ।

    রবিবার বিকেলে রাজকুমার সাঁপুই নামে স্থানীয় এক যুবক, মৈপীঠ-বৈকুণ্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় শ্মশানঘাটের কাছে প্রথম বাঘটিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছিলেন। গ্রামে ফিরে তিনি সকলকে সেই কথা জানান। স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। গ্রামবাসীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে জঙ্গলের গিয়ে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছিল। অবিলম্বে খবর দেওয়া হয় বন দপ্তরে ও স্থানীয় থানায়।

    খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন বন দপ্তরের কর্মীরা ও কুলতলি থানার পুলিশ। বাঘটি যাতে রাতের অন্ধকারে কোনও ভাবে গ্রামের ভিতরে ঢুকে না পড়ে, তার জন্য রবিবার রাতেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নগেনাবাদ ৯ নম্বর মুলার জেটিঘাটের কাছে, গ্রাম-লাগোয়া জঙ্গল বরাবর নাইলনের জাল লাগানো হয়। এর ফলে রাতে গ্রামে ঢুকতে পারেনি বাঘটি।

    তবে সোমবার সকালে জানা গিয়েছিল বন দপ্তরের লাগানো ওই নাইলনের জালের আশপাশেই কোথাও রয়েছে বাঘটি। সেই মতো তাকে বন্দি করার পরিকল্পনা করা হয়। স্থানীয় টাইগার টিমের সদস্যরা যখন বাঘটিকে বন্দি করার জন্য ফাঁদ পাতছিলেন, সেই সময়ই সেই দলের অন্যতম সদস্য, গণেশ শ্যামলকে আক্রমণ করেছিল বাঘটি। কামড়ে বসিয়েছিল তাঁর ঘাড়ে।

    তাঁকে বাঁচাতে দলের বাকি সদস্যরা লাঠি দিয়ে বাঘটিকে আঘাত করা শুরু করেছিলেন। এতে ওই বনকর্মীকে গুরুতর আহত অবস্থায় সেখানে ফেলে সে জঙ্গলের গভীরে পালিয়েছিল। বর্তমানে ওই আহত বনকর্মীর চিকিৎসা চলছে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে।

  • Link to this news (এই সময়)